বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম এখন পর্যন্ত ভোট দিতে পারেনি, ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তারা ভোট দিতে চায়, বয়স্করা জীবনের শেষ ভোট সুষ্ঠু পরিবেশে দিতে চায়। ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিন। তারা দেশ চালাবে।’
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার আদালত মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। মানুষ ভোট দিতে চায়। ভোটের মাধ্যমে পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চায়। আওয়ামী লীগ ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ, আধিপত্য আর মেনে নেবে না।
ড. মোহাম্মদ ইউনূস দেশের গৌরব উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর এ সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন করেছি। কারণ তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে চিনিয়েছেন। কর্মের মাধ্যমে নোবেল অর্জন করেছেন। তিন মাসে আশা করেছিলাম সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবেন। এদেশ কীভাবে চলবে তা ৩১ দফার মাধ্যমে বহু আগেই বিএনপি তুলে ধরেছে। যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন, জাতির জন্য মঙ্গল। দেরি হলে সমস্যাগুলো বাড়বে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে পরামর্শ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির আন্দোলন শেষ হয়নি। জনগণের অধিকার, ভোটাধিকার, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে, দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে পারলেই এ আন্দোলন শেষ হবে।
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি নেতাকর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরে দলের মহাসচিব বলেন, এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য অনেক প্রাণ দিতে হয়েছে। এবারের আন্দোলনেও ফেনীর অনেককে হত্যা করা হয়েছে। বিগত বছরে আওয়ামী লীগ আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে হত্যা ও ৭০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। এখনো সন্তান ও পিতৃহারা মানুষজন স্বজনদের ফেরার অপেক্ষা করছেন। আমরা মামলা নিয়ে কারাগারে গেছি কিন্তু মাথা নত করিনি। এ সংগ্রামের মাধ্যমে আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি।
বিএনপি এ দেশকে সবকিছু দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশকে যা কিছু দিয়েছে তা বিএনপি দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নতুন করে অর্থনৈতিক ও সংবাদ মাধ্যমকে মুক্ত করেছিলেন। তারপর তাকে হত্যা করে এরশাদ চেষ্টা করেছিল দেশকে ধ্বংস করার। কিন্তু খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের কারণে তাতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। নিজেরা লুটপাট করেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে আয়োজিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন ও সদস্য আবু তালেব।
এদিন ছাগলনাইয়াতে মির্জা ফখরুলের আগমনে নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে যায় গোটা সভাস্থল।
এর আগে দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ির প্রাঙ্গণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।