মসজিদে মাইক ব্যবহারের পক্ষ-বিপক্ষ দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে আহত ৪

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2024-10-18 15:43:27

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মসজিদে মাইক ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপের মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ফজর নামাজ শেষে এই ঘটনাটি ঘটে বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর (রসুলপুর) কাজী বাড়ি জামে মসজিদে। এই ঘটনায় মসজিদটির সাবেক ইমামসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মসজিদটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম মন্ডল।

শুক্রবার বিকালে সংঘর্ষ এবং থানায় অভিযোগের বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেন বালিয়াকান্দি থানার উপ পরিদর্শক আল-আমীন।

আহতরা হলেন- মাইক ব্যবহার করার পক্ষের গ্রুপের ত্রিলোচনপুর গ্রামের মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে আব্দুল করিম (৩০), একই গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে আব্দুল আখের (৩৮), আব্দুল বারেকের ছেলে ইমন শেখ (২০) এবং মাইক ব্যবহার না করার পক্ষের গ্রুপের বারেক মন্ডলের ছেলে ইমরান মন্ডল (৪৫)।

থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর ধরে উক্ত মসজিদে ইমামতি করে আসছেন ত্রিলোচনপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মাদের ছেলে চরকুলটিয়া মাদরাসার উপাধাক্ষ্য কাজী নুরুল কাইয়ুম খোকন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফতুয়া দেন ‘মসজিদের মাইকে আজান দেওয়া জায়েজ না, মাইকে আজান দিলে কাফের হয়ে যাবে’। এই ফতুয়া দিয়ে দীর্ঘদিন তিনি  মসজিদে মাইক ব্যবহার করতে দেন না।

গ্রামবাসী ও মসজিদের মুসল্লীরা মসজিদে আজান দেওয়ার জন্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি নতুন মাইক লাগান। মাইক লাগানোর পর থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় আর মসজিদে আসেন না। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই তিনি প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। সবার হাতেই লাঠি ছিল। এরপর তিনি মাইকে কেন আজান দেওয়া হচ্ছে জানতে চেয়েই হামলা শুরু করেন মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের ওপর।

এ সময় তার অনুসারী দুর্বৃত্তরা মসজিদের মাইকের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলেন ও খুলে নিয়ে যান। এ সময় তারা মসজিদের লাইটগুলোও ভেঙে ফেলেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত সাবেক ইমাম কাজী নুরুল কাইয়ুম খোকন মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে জানান, এই মসজিদটি অনেক প্রাচীন। প্রায় ৮০ বছর বয়স মসজিদটির। এই মসজিদে আগে কোনদিনও মাইক ব্যবহার করা হতো না। এই মসজিদটি যে গ্রামে স্থাপিত সেই গ্রামের মুসল্লিদের সর্বসম্মতিক্রমে মাইক ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এলাকায় বিশৃঙ্খলা বাধানোর জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামের বহিরাগত কিছু লোকজন সন্ত্রাসী কায়দায় জোড়পূর্বক মসজিদে মাইক লাগায়। মাইক লাগানোর পর থেকে তিনি ও তার অনুসারিরা বিকল্প জায়গাতে নামাজ আদায় করে আসছিলেন।

তিনি আরও জানান, কিন্তু যেহেতেু উক্ত মসজিদটি অনেক প্রাচীন। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নেন ওই মসজিদেই তারা নামাজ আদায় করবেন। তারই প্রেক্ষিতে তারা শুক্রবার ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করেন। মসজিদে প্রবেশ করার পর তাদের দেখে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় মসজিদ কমিটির কয়েকজন সদস্য। এ সময় ইমরান মন্ডল নামে তাদের এক মুসল্লিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছেন।

কাজী নুরুল কাইয়ুম খোকন জানান, এরই মধ্যে মসজিদটিতে দীর্ঘদিন মাইক ব্যবহার না করার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। এরপরেও তারা মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক হাসান বার্তা২৪.কমকে জানান, এ ঘটনায় তিনজন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসা শেষে তারা তিনজনই বাড়ি ফিরে গেছেন।

উপ পরিদর্শক আল-আমীন বার্তা২৪.কমকে জানান, মসজিদে মাইক ব্যবহার করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Related News