চুয়াডাঙ্গায় ঠান্ডা, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থাকার পর মারা গেল আঁখি খাতুন (২) নামের এক শিশু।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে উন্নত চিকিৎসা জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন। তবে চিকিৎসা খরচের অভাবে পরিবারের সদস্যরা শিশুকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে বেলা তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। আঁখি খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের মাঠপাড়ার কৃষক আক্তারুলের মেয়ে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ১০ দিন পূর্বে শিশু আঁখি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে দর্শনার একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক রফিকুলের কাছে নেওয়া হয়। তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী টানা এক সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার পরও আঁখির শরীরের কোনো উন্নতি না হলে গত মঙ্গলবার তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুদিন সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পরও শিশু আঁখির অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
শিশুটির পিতা আক্তারুল বলেন, আঁখি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিল। ১০ দিন আগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিন যত গেছে আঁখির অবস্থা আরও খারাপ হয়। একপর্যায়ে চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু শুক্রবার চিকিৎসক আঁখিকে রাজশাহী নিতে বলেন এবং ছুটি দিয়ে দেন। রাজশাহী নেয়ার মতো টাকা না থাকায় মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। পরে বেলা তিনটার দিকে মেয়েটি মারা যায়।
শিশুটির চিকিৎসা ও মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘শিশুটিকে সঠিক নিয়মে স্যালাইন খাওয়ানো হয়নি। সাধারণত ডায়রিয়া হলে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের ক্ষেত্রে আধা লিটার পানিতে একটি স্যালাইন গুলিয়ে খেতে হয়। কিন্তু এই শিশুটির ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা ২৫০ মিলিলিটার পানিতে প্রতি প্যাকেট স্যালাইন গুলিয়ে খেতে দেয়। এর ফলে শিশুটির শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। শুক্রবার পরীক্ষার রিপোর্টে বিষয়টি জানার পর শিশুটির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। বিকেলে জানতে পারি শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।’
ডা. মিলন বলেন, ‘অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের পানির ভারসাম্য বিঘ্নিত করে এবং সঠিক পরিমাণে পানি না খাওয়ার কারণে শিশুটি আরও ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়।’