মিয়ানমারের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড | 2024-12-19 11:40:21

মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মিয়ানমারের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, তবে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমরা তাদের দুটি কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি। এক- এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। দুই- রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে তাদের ফেরত পাঠানো।

তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা নাগরিকত্ব ইস্যুর কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, এই মানুষদের নিরাপত্তা এবং জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সীমান্তে কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রন নেই মিয়ানমারের। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বার্তাকে জানায়, মিয়ানমারের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তবর্তী দেশগুলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছে থাইল্যান্ড।

ব্যাংককে ২০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি, সেখানে সংঘটিত অপরাধ এবং দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রত্যেকটি প্রতিবেশী দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের নিয়ে এই বৈঠকটি বেশ ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এর আগে বুধবার মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আলোচনা হয়।

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে তারাও স্বীকার করেছেন। আমরা তাদের বলেছি যে তাদের সীমান্তে কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। তারা সেটার দ্বিমত করেননি।

বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরাপদে এবং অধিকারের সঙ্গে ফেরত নিতে হবে। আজকের বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। সেখানে একটি যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশের একটাই লক্ষ্য, যখন মিয়ানমার শান্ত হবে, তখন যাতে ফেরত পাঠানো যায় নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করে। এ লক্ষ্যেই কাজ করবে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে রামাদা প্লাজা বাই উইনধাম ব্যাংকক মেনাম রিভারসাইডে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে এ কথা বলেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৪) এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাস।

ব্যাংককে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফয়েজ মুরশীদ কাজীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, দূতাবাসের মিনিস্টার অ্যান্ড ডিসিএম মালেকা পারভীন, মিনিস্টার কাউন্সেলর হাসনাত আহমেদ প্রমুখ।

অভিবাসী দিবস নিয়ে তিনি বলেন, এখনও নেপালের শ্রমিকদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ খরচ দিয়ে বাংলাদেশিদের কাজের জন্য বিদেশে যেতে হচ্ছে। প্রায় ১৩-১৪ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছে মানুষ এবং প্রতারিত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সমস্যা এমন হয়নি যে সবাইকে বিদেশে পাড়ি দিতে হবে। এর চাইতে দেশেই অনেক কাজ করার সুযোগ আছে দেশের মানবপাচারকারীদের বিগত সময়ে ধরা হয়নি বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

তৌহিদ হোসেন বলেন, অনেকে বলেন বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দেশের ইমেজ ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। আসলে কি তাই? দেশের ইমেজ ক্ষতি হয় যখন দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েটকে অপমান করা হয়। দেশের ব্যাংক লুট করলে, দুর্নীতি করলে ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের শ্রমিকদের অনেক সুনাম রয়েছে বিদেশে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে ছাত্ররা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে পরিবর্তন এনেছে। দেশের নূন্যতম সংস্কারগুলি যেন আমরা করে যাই সেটার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্ম আমাদের ওপর চাপিয়েছে। আমরা সেটা সংস্কার করে যাবো।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটা সংস্কার করে যাবো যেন আবার যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে তারা আবার স্বৈরাচার হয়ে না উঠে। গত ১৫ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারাও কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছিল। সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর মেনিফেস্টোতেই থাকতে হবে কি কি কাজ তারা করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি আবার যেন দশ বছর পর আমাদের বাচ্চাদের রাস্তায় নামতে না হয়।

Related News