রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় ৭১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেও নাম প্রকাশে লুকোচুরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

গত ৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯ তম সিন্ডিকেট সভায় দুই সেমিস্টারের জন্য ৩৩ জন শিক্ষার্থী এবং এক সেমিস্টারের জন্য ২৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি সাবেক ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড.মো.শওকাত আলী জানান।

এর আগে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি ৭২ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা জমা দেয়। যা ১০৮ তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। পরে ১০৯ তম সিন্ডিকেট সভায় একজনকে মানবিক বিবেচনায় বাদ দিয়ে বাকি ৭১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এইদিকে অর্ধমাস পেরিয়ে গেলেও নামের তালিকা না পেয়ে হতাশ শিক্ষার্থীরা। কাকে কোন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ৭১ জন কারা সেটি না জানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই। এছাড়া তাদের শাস্তির ব্যাপারেও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবু সাঈদ হত্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই এসে পরীক্ষা দিচ্ছেন।

এই ব্যাপারে বেরোবির কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারিয়ার সোহাগ বলেন, যে ৭১ জনের তালিকা রয়েছে সেটি ত্রুটিপূর্ণ এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারা কি ধরনের অপরাধ করেছে তার একটি মাপকাঠি তৈরি করে সেই অনুযায়ী তাদের শাস্তি দিতে হবে। সেই অনুয়ায়ী যদি শাস্তি না দেওয়া হয় সেটি তো সুষ্ঠু বিচার হয় না। সার্বিকভাবে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে সেটি ব্যক্তিগত ভাবে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি এর বিরোধিতা করে আসছি। আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করছে এবং তারা সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, রাবিতে অপরাধের মাপ কাঠি অনুযায়ী স্থায়ী বহিষ্কার, হলের সিট বাতিল, অর্থদণ্ড ও যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক সেমিস্টার, দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করেই দায় সারছেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে প্রশাসন আশ্বস্ত করলেও তা কবে করা হবে এবং কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে কোন পরিষ্কার বক্তব্য বা রূপরেখা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.মো. ফেরদৌসর রহমানের কাছে নামের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভার পর নামের তালিকা রেজিস্ট্রারের কাছে আছে। নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগে বিভাগ গুলোতে নোটিশ যাবে।

রেজিস্টার ড. মো. হারুন অর রশিদ কাছে তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সাংবাদিকদের তালিকা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান সাংবাদিকদের এই তালিকা দেওয়া হবে না।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভর্তি পদ্ধতিতে বিদ্যমান থাকা কোটা পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় ভর্তি পদ্ধতিতে বিদ্যমান থাকা ৩ শতাংশ পোষ্য কোটা সম্পূর্ণভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সামগ্রিক ১১ শতাংশ কোটা সংস্কার করে কমিয়ে আনা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় কোটার সংখ্যা কমিয়ে আনার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সংশোধিত কোটা ব্যবস্থায় পোষ্য কোটা বাতিলসহ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা তিন শতাংশ, প্রতিবন্ধী কোটা এক শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং উপজাতি কোটা এক শতাংশ রাখা হয়েছে। তবে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে সেই আসন পূরণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পোষ্য কোটা বাতিলসহ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেকৃবি শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, সময়োপযোগী এবং শিক্ষার্থীবান্ধব একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৈষম্য দূরীকরণে এত জীবন বিসর্জনের পরে পোষ্য কোটা সহ অন্যান্য কোটার বৈষম্যমূলক অসামঞ্জস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতিতে থাকবে না সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। আমরা শেকৃবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে এসেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দল।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেট (আবু সাঈদ গেট) তারা পরিদর্শন করেন। 

এসময় তারা প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে সেই দিনের ঘটনার বিবরণ শোনেন। এছাড়াও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন।

পরে গণমাধ্যমকে প্রসিকিউটর মইনুল ইসলাম জানান, জুলাই বিপ্লবের পর অনেক অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে এসেছে। এক সপ্তাহ আগে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। সেজন্য আজ আমরা রংপুরে এসেছি। যারা চাক্ষুষ ঘটনাস্থলে ছিলেন, আমরা তাদের কথা শুনব। তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন আদর্শবান মহান নেতা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আদর্শবান, দেশপ্রেমিক, সত্যবাদী এবং পরিশ্রমী মনোভাব নিয়ে দেশগঠনে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই হবে আমাদের জন্যে শহীদ রাষ্ট্রপতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক কমপ্লেক্সে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ময়মনসিংহ বিভাগের জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

প্রিন্স বলেন, শহীদ জিয়ার জীবনাদর্শ যুগে যুগে আমাদের অনুপ্রেরণা দিবে এবং দেশগঠনে পাথেয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অনুসারী সকলকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সততা, দেশপ্রেম, কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে আগামীতে পথচলা উচিত। আমি উপস্থিত শিক্ষকদের জিয়াউর রহমানের কৃষিনীতির উপর অধিকতর গবেষণা-পর্যালোচনার আহবান জানাই।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক, অধ্যাপক ড. সামছুল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসান বাদল, অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান সরকারসহ আমন্ত্রিত অতিথি এবং নেতৃবৃন্দ।

সভা শেষে শিক্ষক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে নিমগাছের চারা রোপন করা হয়।