ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবিতে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে আগামী সিন্ডিকেটে তার শাস্তির বিষয় পুনর্বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস পেলে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পরবর্তী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান এসে শিক্ষার্থী এবং উপাচার্যের সাথে কথা বলে বিচারের আশ্বাস দেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তদন্ত কমিটিকে সব অভিযোগের প্রমাণ সহ উপস্থাপন করেন। তারা দীর্ঘ ৬ বছর ধরে শিক্ষক হাফিজের নির্যাতন সহ্য করে গেছে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে শিক্ষক হাফিজুলের পক্ষে রায় দিয়েছে। সেই শিক্ষকের শাস্তি ১ বছরের ছুটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, এত এত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাত্র ১ বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে হাফিজকে আরও শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন আরও কঠোর করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে, গত বছরের ৭ অক্টোবর সেই শিক্ষককের বহিষ্কারের দাবীতে আন্দোলনে নামে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২৭ দফা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর ভিত্তিতে ৮ অক্টোবর ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির তথ্যমতে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণ পেলেও সেই শিক্ষক হাফিজুলকে ১ বছরের ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবারও বিক্ষোভের ডাক দেয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কাজী মোস্তফা আরিফ বলেন, আমরা তদন্ত কমিটিতে পাঁচজন সদস্য ছিলাম। দুই মাসের মতো সময় নিয়ে প্রত্যেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্য নিয়েছিলাম। সব স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে সব যাচাই-বাছাই করে আমরা প্রায় ১৭/১৮ টি অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলাম। আমরা এগুলো উল্লেখ করেই শাস্তির সুপারিশ সহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। এখন প্রশাসন কোন প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি বলতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, তোমাদের আন্দোলনের সাথে সাথেই আমি উপস্থিত হয়ে তোমাদের দাবি-দাওয়া শুনেছি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্যের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন এ নিয়ে একটা এপ্লিকেশন জমা দিতে। পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিং এ এর পুনর্বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক সমকামিতায় মিলিত হতে চাওয়া, ফলাফল টেম্পারিং, মানসিক নির্যাতন, নারী শিক্ষার্থীকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পেটানো ও ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি, কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল নম্বর কম দেওয়া, ক্লাসে মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে কটূক্তি ও তাদের গালাগাল করা সহ ২৭টি অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও তাকে ইনক্রিমেন্ট বাতিল ও বাধ্যতামূলক ১ বছরের ছুটির শাস্তিকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে শাস্তি প্রত্যাখ্যান করে আবারও আন্দোলনে নামেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।