জন্মদিনে নতুন গান আর যুক্তরাষ্ট্রে শো’র অভিজ্ঞতা নিয়ে ফাহমিদা
বেশ লম্বা সময় যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। সেখানে বেশ কয়েকটি শোতে গাওয়ার পাশাপাশি ঘোরাঘুরি করে দারুণ সময় কাটিয়েছেন তিনি। সেখানকার কিছু মুহূর্ত ফেসবুক ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগিও করে নিয়েছেন। আগামীকাল এই তারকার জন্মদিন, এ উপলক্ষে আসছে নতুন গান। এসব নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
কেমন আছেন?
আমি বেশ ভালো আছি। যুক্তরাষ্ট্রে দারুণ কিছু শো করলাম, মনের মতো দর্শক পেয়েছিলাম। প্রতিটি শোতেই আমার গানের লিস্ট ফুরিয়ে যায়, কিন্তু তারা আরও গান শুনতে চায়! একজন শিল্পীর জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দ আর নেই!
আগামীকাল জন্মদিন। কিভাবে সেলিব্রেট করবেন?
জন্মদিনে নিজে কিছু না করলেও মনের ভেতরে আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আমার ভক্তরাই আমার জন্মদিন স্পেশ্যাল করে দেয় প্রতিবছর। আর আমি সেই ভালোবাসার মূল্য দিতেই চেষ্টা করি নতুন কোন গান তাদের উপহার দিতে। এবারও আসছে নতুন একটি গানের ভিডিও। গানটির নাম ‘কাছের মানুষ’। এটি লিখেছেন ইলা মজি, সুর করেছি আমি নিজেই। সঙ্গীতায়োজন করেছেন সজীব দাস, মিউজিক ভিডিও করেছেন আশিক মাহমুদ। প্রেমময় আবেশের গানটি আমার ভক্ত অনুরাগীদের ভালো লাগবে বলে বিশ্বাস।
আপনি বিখ্যাত বাবার মেয়ে। এরপর নিজেদের যোগ্যতায় আপনারা দুই বোন (সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবী) জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ আপনাদের চেনে, অন্যরকম চোখে দেখে। এগুলো ভাবতে কেমন লাগে?
এটাকে আমার নিখাদ ভালোবাসা মনে হয়। এই ভালোবাসা এক অনন্য অর্জন। সবার ভাগ্যে তা জোটে না। এটা কেউ দুম করে পেয়ে যায় না। অনেকেই পপুলারিটি পেয়ে যেতে পারেন হুট করে, কিন্তু মানুষের মনে এভাবে জায়গা করে নেয়া সহজ নয়। অর্জন করতে হয়। আমার বাবা কিংবা আমরা ভাই বোনেরা কষ্ট, সাধনা আর সততা দিয়ে সেটা অর্জন করেছি। এবার নিউইয়র্কে আমার বাবার স্মরণে (প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত মাহমুদুন্নবী) যে প্রোগ্রামটা করলাম, আমেরিকার মতো ব্যস্ত দেশে একটা ওয়ার্কিং ডে’তেও এতো মানুষ আসবেন, এভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেবেন সেটা ভাবতেই পারিনি। টানা তিন ঘণ্টা আমি গাইলাম, তারপরও দর্শক সিট ছেড়ে নড়ছিলেন না। এটা এক বিরল অভিজ্ঞতা আমার জন্য।
ফেসবুকে আপনি নানা ধরনের লেখালেখি করেন। লেখালেখির ব্যাপারটা কিভাবে এলো?
গানটা যেমন আমার ভাবনার একটি অংশ, তেমনি লেখাটাও আমার ভাবনারই অংশ। আমার যাপিত জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথাই আমার ফেসবুক অনুসারীদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার লেখায় সমসাময়িক বিষয়গুলো উঠে আসে। মানুষের বেঁচে থাকা, চিন্তার জগৎ, চাওয়া-না পাওয়ার কথাগুলোই তো লিখি। আমাদের চলার পথে কতো কর্মযজ্ঞ, কখনো তা ভুল হয়, কখনো বা ঠিক। জীবন কখনো সহজ, কখনো কঠিন। ভুল থেকে শিখে যে জীবন চলতে পারে তার জীবন সহজ হয়ে যায়। মুখে ফুটে ওঠে এক টুকরো হাসি। আর এসব আবেগ অনুভূতি নিয়েই তো গান।
লেখালেখি কবে থেকে শুরু হলো?
অনেক আগে থেকেই আমি লিখি। আর এখন তো ফেসবুকে ফাহমিদা নবী’স ডায়েরী নামের একটি অ্যালবামে লিখি। আমি জীবনকে অনেক সহজভাবে দেখি। জীবনে নানা চড়াই-উৎরাই আসবেই, কিন্তু হাসি ভুলে গেলে চলবে না। কাউকে একটা ফুল উপহার দিলে দেখবেন তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এই হাসি তো অমূল্য। এগুলো আমি ছোট্ট বেলা থেকেই তো শিখিনি। এক একটা ঘটনা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার মনে হয়, আমার এই অভিজ্ঞতাগুলো জেনে কারও হয়তো ভালো লাগবে, কারও চিন্তার নতুন দিক উন্মোচিত হবে, কেউ কেউ আবার কিছু সমস্যার সমাধান হয়তো খুঁজে পাবে।
ফেসবুক খুললেই দেখা যায় এখন সবাই নাচ করে, গান করে, লেখালেখি করে, ফটোগ্রাফী করে। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?
এখন যার যার ফেসবুক আইডি যেন নিজস্ব এক একটা টিভি চ্যানেল! এখন সব একা করা যায়। সবার মনেই গান আসে, কবিতা আসে। সবাই তা মানুষের সামনে প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু এতোকিছু করেও তারা তাদের কাঙ্খিত জায়গাটিতে পৌঁছতে পারছে না। ফলে আমি বলবো- কেউ একটু শিখে, চর্চা করে তারপর ফেসবুকে প্রচার করে তাহলে কিন্তু সে নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। নিজের মেধাকে প্রকাশের যে সুযোগ ফেসবুক করে দিয়েছে সেটার সুন্দর ব্যবহার তাহলে করা সম্ভব।
আপনার প্রিয় গীতিকার-সুরকার কারা?
আমাকে যদি গান বাছাই করতে হয় তাহলে আমি কারও নাম দেখে বাছাই করি না। যার গানের কথা কিংবা সুর ভালো তারটাই বাছাই করি। ফলে আমার কাছে কার বয়স কতো, কার জনপ্রিয়তা কতোখানি এগুলো ম্যাটার করে না।
এমন কোন শিল্পী আছে যার সঙ্গে কাজ করতে পারলে মনে কতো সঙ্গীতজীবনের ষোলকলা পূর্ণ হলো?
আমি আবারও বলব, যে আমাকে বোঝে, যে আমাকে আমার চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে গান করবে, আমি তার সঙ্গে কাজ করেই নিজেকে ধণ্য মনে করি। আমি এমন অনেক কম বয়সীদের সঙ্গেও গান করেছি, যাদের সঙ্গে কাজ করে মনে হয়েছে দারুণ কিছু করলাম।
এমন কি কিছু আছে যা করা বাকী রয়ে গেলো?
আমি আমার গান নিয়ে আছি। গানের স্কুল ‘কারিগরী’ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এখন আমার একটা ইচ্ছে আছে দেশে এবং দেশের বাইরে বাচ্চাদের নিয়ে কিছু কাজ করতে চাই। কারণ তারাই তো আসলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে টেনে নিয়ে যাবে সামনের দিকে।