সলোমন দ্বীপের কাছে সবচেয়ে বড় প্রবালদ্বীপের সন্ধান
প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ থেকে এটিকে একটি বড় আকৃতির জীবের মতো দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সংস্থা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি এই তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরা।
সংস্থাটি জানায়, বিশাল এই প্রবালটির দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার (১০৫ ফুট) এবং প্রশস্ত ৩৪ মিটার (১১১ ফুট)। প্রবালটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো বলে মনে করা হচ্ছে। এটি প্রধানত বাদামী রঙয়ের। তবে এর আস্তরণ উজ্জ্বল হলুদ, নীল এবং লাল রঙে ছিটানো। এটা অনেকটা দেখতে সমুদ্রপৃষ্ঠে ঢেউয়ের মতো।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সমুদ্র এবং প্রবালজীবন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েছে। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ক্ষতির প্রধান কারণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সামান্য গভীর জলে এই বিশাল আকৃতির প্রবালকে গবেষকরা মরূদ্যানে সাক্ষী হওয়া 'এক আশার আলো' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গবেষকরা জানান, প্রবালটির রঙ ও আকার থাকা সত্ত্বেও খালি চোখে এটিকে সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে এক বিশাল শিলার মতো দেখায়। এর আয়তনের কারণে প্রথমে এটিকে দেখে মনে হয়েছিলো কোনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। কিন্তু যখন একদল গবেষক পানিতে ডুব দিয়ে এটির কাছে গিয়ে দেখে, তখন আবিষ্কার করে এখানে বিস্তার করেছে বিশাল এই প্রবাল।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির গবেষক ও প্রিস্টাইন সিসের প্রতিষ্ঠাতা এনরিক সানা জানান, ‘আমরা এখন মনে করি পৃথিবীতে নতুন করে অনুসন্ধান করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঠিক তখনই আমরা প্রায় এক বিলিয়ন ছোট পলিপের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এই বিশাল প্রবালটি খুঁজে পেলাম। যা জীবন এবং রঙের সঙ্গে স্পন্দিত হচ্ছে।’
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা গাছ খুঁজে পাওয়ার মতোই, এটি একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বলেও জানান তিনি। নথি অনুযায়ী এর আগে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় প্রবাল ছিল আমেরিকান সামোয়াতে অবস্থিত ‘বিগ মোমা’। এই প্রবাল দ্বীপটি আগের সেই রেকর্ড-ব্রেকারের চেয়ে তিনগুণ বড় এবং এর আকার প্রায় দুটি বাস্কেটবল কোর্ট বা পাঁচটি টেনিস কোর্টের সমান।
কিন্তু প্রবালটির টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কার কারণ রয়েছে বলেও জানান এই গবেষক। তিনি বলেন, প্রবালটি দূরবর্তী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বিশালাকৃতির এই প্রবালটির সন্ধান এমন সময়ে এসেছে, যখন ২০০টি দেশের প্রতিনিধিদল জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৯ এ সমবেত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপের জন্যই প্রতিবছর এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পানির নিচের জীবনের টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, পৃথিবীজুড়ে যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে একসময় পানির নিচে থাকা এসব প্রবালগুলো পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। গতকাল (বুধবার) প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন জানায়, সামুদ্রিক প্রবাল প্রজাতির ৪৪ শতাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে অঞ্চলটি প্রবাল ঝুঁকির প্রথম সারিতে রয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সলোমন দ্বীপপুঞ্জ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেরেমিয়া মানেলে। তিনি বলেছেন, "সমুদ্র আমাদের জীবিকা সরবরাহ করে এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক অবদান রেখেছে। আমাদের বেঁচে থাকা এসব প্রবাল প্রাচীরের উপর নির্ভর করে। তাই এই প্রবাল আবিষ্কার ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা ও টিকিয়ে রাখতে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে।"