মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশে তাদের সব ধরণের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্য খাতও চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর প্রভাবে মা ও শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার, ব্যাপক অপুষ্টি, যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব (টিবি) এবং ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থাটি, বছরের পর বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, অপুষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সহ যক্ষ্মা রোগের মতো সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এছাড়াও সংস্থাটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সহজীকরণ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু যুগান্তকারী অর্জনে অবদান রাখতে সহায়তা করেছে। ১৯৪০ সাল থেকে এটি প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ ও প্রসাধনী বিল পাসকে সমর্থন দিয়ে আসছে পাশাপাশি নকল ওষুধ ব্যবহারের ওপর কঠোর আইন প্রবর্তন করা সহ ওষুধ রপ্তানিকে আরও উপযোগী করে ভোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবদান রাখতে কাজ করেছে।
কিন্তু তাদের এ সিদ্ধান্তে ওষুধ শিল্পের ওপর প্রবর্তিত আইনগুলো দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষকে অনিরাপদ ওষুধের মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম রফতানি খাত ওষুধ শিল্পের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশে অপুষ্টির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং লাখ লাখ দুর্বল ব্যক্তিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
এটির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি-তে (এসএমসি)। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বাস্থ্য পণ্যগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে পেতো। এসএমসি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাউডারের ৪১ মিলিয়ন পাউডার সরবরাহ করেছে। ৯০ শতাংশ ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া ফেমিনিন হাইজিন পণ্যের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু এখন এটা নিয়েও ভাবতে হবে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ইউএসএআইডি-এর অবদান অপরিহার্য। লাখ লাখ মানুষকে নতুন মাত্রা দিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য পণ্যের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে সহজীকীকরণ করেছে। এই সহায়তা স্থগিত করায় দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দেবে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়িয়ে দেবে এবং লাখ লাখ মানুষকে প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে ফেলে দেবে।
সীমিত সম্পদ ও দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সহ একটি জাতির জন্য, মার্কিন সমর্থন হারানো বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং স্বাস্থ্যের টেকসই উন্নয়ন অর্জনের দিকে অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত করবে।