দখলদার ইসরায়েলিরা এবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য মুসলমানদের মসজিদ দখল করে নিয়েছে।
রোববার পশ্চিম তীরের হেবরন এলাকার ঐতিহাসিক ইবরাহিমি মসজিদ ইসরায়েলিরা দখলে নেয়।
বিজ্ঞাপন
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সুকোটের ইহুদি ছুটি উদযাপনের জন্য ইসরায়েল রোববার পশ্চিম তীরের শহর হেবরনের ইবরাহিমি মসজিদ মুসলিমদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।
হেবরনে প্যালেস্টাইন এনডাউমেন্টের জেনারেল-ডিরেক্টর ঘাসান আল-রাজাবি আনাদোলুকে বলেছেন, ‘মসজিদটি মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
রাজাবি বলেন, ‘অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য মসজিদ কমপ্লেক্সের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা স্থায়ীভাবে দখল করে রেখেছে। এর থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, বসতি স্থাপনকারীরা সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পাচ্ছে। অথচ সেখানে মুসলমানদের তাদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
ইবরাহিমি মসজিদটি ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণাধীন দক্ষিণ পশ্চিম তীরের পুরোনো শহর হেবরনে অবস্থিত। প্রায় ৪০০ অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদি সেখানে বাস করে। তাদেরকে প্রায় দেড় হাজার ইসরায়েলি সৈন্য পাহারা দেয়।
মসজিদটি মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদিদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র। কারণ তাদের বিশ্বাস, এখানে সমাহিত করা হয়েছে হজরত ইবরাহিম (আব্রাহাম), হজরত ইসহাক ও হজরত ইয়াকুব (জ্যাকব) নবীকে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্টার পর থেকে নানা সময়ে ইসরায়েলিদের হামলা ও অপতৎপরতার শিকার হয়েছে ইবরাহিমি মসজিদ। ১৯৯৪ সালে মসজিদটিতে গণহত্যা চালায় এক ইসরায়েলি সেটেলার (বসতি স্থাপনকারী)। তখন ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১৫০ জন আহত হন। এরপর মসজিদটিকে মুসলিম ও ইহুদিদের জন্য দুইভাগে ভাগ করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
হজ প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় নিবন্ধনে সাড়া নেই হজযাত্রীদের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ অক্টোবর ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। যার মাধ্যমে হজের খরচ কত, এই প্রশ্নেরও অবসান ঘটবে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে হজযাত্রী পরিবহনে উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান।
বৈঠকে উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনও একটু বিবেচনার বিষয় রয়েছে। তাই আমরা চূড়ান্ত কথা বলতে পারবো না।
আমরা যতটুকু জেনেছি, বিমানের পক্ষ থেকে এবার উড়োজাহাজ ভাড়া ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। আপনারা সেটা মেনে নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটার ওপর আরো কাজ করছি, আরো কমানোর চেষ্টা করছি।
হজের খরচ কত কমছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খালিদ হোসেন বলেন, হজ প্যাকেজে কত কমছে, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। সৌদি আরবের খবরটা (খরচের হিসাব) এখনো আমাদের কাছে আসেনি।
অন্য বছরের মতো এবারো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই নাস হজযাত্রী পরিবহন করবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা।
এবার হজ প্যাকেজ কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, এবার ভালো প্যাকেজ দেবো। গতবারের চেয়ে খরচ কম হবে- ইনশাআল্লাহ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের খরচ অন্তত ৫০ হাজার টাকা কমবে। উড়োজাহাজ ভাড়া কিছুটা কমলে, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য টুকটাক খরচ কমিয়ে সোয়া পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে সাধারণ প্যাকেজ করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
২৬ সদস্যের হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভাপতি ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা। এ কমিটিতেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আগামী ৩০ অক্টোবর নির্বাহী কমিটির সভা বসছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। হজ প্যাকেজ নির্ধারণের দায়িত্ব এ কমিটির।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
হজ প্যাকেজ নির্ধারণে বাংলাদেশ অংশের খরচের মধ্যে উড়োজাহাজ ভাড়া সবচেয়ে বড় খাত। গত বছর হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। এবার তা ২০ হাজার টাকার মতো কমিয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এ ভাড়া আরো কমাতে দর কষাকষি করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী বছর হজের খরচ চলতি বছরের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা কমিয়ে সোয়া ৫ লাখ টাকার (সাধারণ প্যাকেজ) মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত আটটা পর্যন্ত হজকোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে মাত্র পাঁচ হাজার ৪৬৩ জন।
হজ প্যাকেজ মূল্যের বাকি টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। যদিও এর মধ্যে মিনা ও আরাফাতের ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পেতে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজের নিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে হজযাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। যদিও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হজের নিবন্ধন চলবে বলে আগেই জানিয়েছে সরকার।
হজ এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, প্যাকেজ ঘোষণা না করে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কত খরচ হবে, এটা না জেনে কেউ নিবন্ধন করবেন না এটাই স্বাভাবিক। আর ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে ভোগান্তিতে পড়বে, এটাও সঠিক নয় বলে মনে করেন তারা।
এবার হজের খরচ কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা কমাতে না পারলে কোটার বড় একটি অংশ এবারও খালি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন হজ এজেন্সি মালিকরা।
সদ্য বাতিল হওয়া হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) এক দায়িত্বশীল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবার হজের খরচ কমবে। তবে কী পরিমাণ কমবে, তা না বলার আগে আমরা বুঝতে পারছি না। আর এবার হজকোটা পূরণ হবে কি না বা হজযাত্রী কেমন হবে সেটাও নির্ভর করছে প্যাকেজের ওপর। প্যাকেজ ঘোষণার পরই আসলে বোঝা যাবে মানুষ কতটা আগ্রহী। প্যাকেজ ঘোষণার আগে মানুষ রেজিস্ট্রেশন করবে না, কারণ সে তো বুঝতে পারছে না যে খরচ তার সামর্থ্যের মধ্যে আছে কি না। কারণ সে তো জানেই না হজে কত টাকা খরচ হবে।’
‘সরকার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এর মধ্যে আবার হঠাৎ করে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন করতে বলছে। এটা নিয়ে বিভ্রান্তি হচ্ছে। কারণ মানুষ মনে করছে ২৩ অক্টোবরের পর আর নিবন্ধন করা যাবে না। এটাও ক্লিয়ার করা দরকার-’ যোগ করেন ওই নেতা।
হাবের সাবেক কমিটির অপর এক নেতা বলেন, ‘সরকার বলছে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে মিনার তাঁবু দূরে নিতে হবে, ভোগান্তি হবে। তাঁবু আর দু-তিন মাস পরে হলেও সমস্যা নেই। কাছে পাওয়া যাবে না, এটা ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে সরকার। কোনো দেশই এভাবে তাড়াহুড়ো করে তাঁবু নেয় না। গত বছরও সরকার এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, সব আগে আগে করার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, আমাদেরও অনেক পরে ভারত, পাকিস্তান তাদের কাজ শেষ করেছে। তাদের হজযাত্রী তো আমাদের থেকে অনেক বেশি।’
গত হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর কোটার চেয়ে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম হজপালন করেছেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ২০ দিনব্যাপী ইসলামি বইমেলার উদ্বোধন করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে তিনি এ উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক বইমেলা আমরা করতে পারি। কিন্তু আন্তর্জাতিক পুস্তক, প্রকাশকরা আসবেন কিনা? পশ্চিমবঙ্গ থেকে হয়তো আসবেন। বাংলা একাডেমির অভিধান পাওয়া যায়, এটা সেখানে বিখ্যাত। আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশকদের আনার চেষ্টা করবো। অন্য দেশ থেকেও যদি আসে তাহলে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
প্রকাশকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, শুধু দেশে নয় বিদেশেও যেন চলে সেটা চেষ্টাও আপনাদের করতে হবে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ১৫১টা স্টল এবারের বইমেলায় স্থান পেয়েছে। গবেষণামূলক ও মৌলিক বই এবার প্রকাশ পেয়েছে। একটি আদর্শিক জীবন গঠনে ইসলামিক বইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। এই মেলায় বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ও পূর্ব চত্বরে আয়োজিত এই মেলা চলবে ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের মেলায় মোট ১৫১টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ, তাফসীর, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক বিভিন্ন বই পাওয়া যাবে। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে সকল বইয়ে দেয়া হবে ৩৫ শতাংশ কমিশন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নামাজ কায়েম করা মানে রুকু, সিজদা ও কোরআন তেলাওয়াত পরিপূর্ণ করা এবং যথাযথ মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।’ -তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১২২
নামাজ এবং তৎসংশ্লিষ্ট কাজগুলো উত্তমরূপে আদায় করাকে ‘নামাজ কায়েম’ বলা হয়। এ ছাড়া নামাজ কায়েমের আরও দুটি দিক রয়েছে-
১. নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি যারা জামাতে শরিক হয় না নবীজী (সা.) তাদের ঘরবাড়ী পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন! -সুনানে আবু দাউদ : ৫৪৮
২. নামাজের কাতার ঠিক রাখা। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করো, কেননা কাতার সোজা করা নামাজ কায়েমেরই অংশ।’ -সহিহ বোখারি : ৭২৩
হাদিসে নামাজের কাতার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে। এসেছে অনেক উৎসাহ ও সতর্কবাণী। হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই অবশ্যই কাতার সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তোমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৭১৭
হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নামাজের সময় নবী কারিম (সা.) আমাদের কাঁধে হাত দিয়ে কাতার সোজা করতেন আর বলতেন, সোজা হও, এলোমেলো থেকো না; তাহলে তোমাদের অন্তরও বক্র ও এলোমেলো হয়ে যাবে...।’ -সহিহ মুসলিম : ৪৩২
কাতার সোজা করার পদ্ধতি পরস্পর কাঁধ ও পায়ের গোড়ালি সোজা করে কাতার সোজা করতে হয়। হজরত আবু উসমান আন-নাহদি (রহ.) বলেন, ‘আমি কাতার সম্পর্কে হজরত ওমরের চেয়ে অধিক যত্নশীল আর কাউকে দেখিনি। নামাজ আরম্ভের আগ মুহূর্তে সবার কাঁধ ও পায়ের দিকে তাকাতেন এবং (সামনের কাতার ফাঁকা থাকলে) লোক পাঠিয়ে পেছনের মুসল্লিদের সামনের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৩৫৫৭
গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ানো আমাদের অবস্থা হলো, কারো গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে সংকোচ হয়। কারো অবস্থা তো আরো করুণ! কেউ তার গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে চাইলে সে সরে যায়!
অনেক মসজিদের ফ্লোরে বা কার্পেটে ঘর ঘর দেওয়া থাকে। অনেকে মনে করে, তার ঘরে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না! এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, নবী কারিম (সা.) বলেন, শোন! তোমরা ফেরেশতাদের মতো কাতারবন্দি হও। আমরা বললাম, তারা কীভাবে কাতারবন্দি হয়? নবীজী বললেন, তারা আগের কাতার পূর্ণ করে এবং গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ায়। -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬১
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা (চেপে চেপে দাঁড়িয়ে) কাতার মজবুত করো, কাতার কাছাকাছি করো এবং কাঁধ বরাবর করো। আল্লাহর কসম! আমি শয়তানকে কালো ছোট ছাগল ছানার মতো কাতারের মাঝে ঢুকতে দেখি।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৭
কাতার বিষয়ে নরম ও বিনয়ী হওয়া নবী কারিম (সা.) এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত (সা.) বলেন, ‘কাতার ঠিক করো, কাঁধ সোজা করো, খালি জায়গা পূর্ণ করো, নরম হও।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৬
তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে, নামাজে যার কাঁধ সবচেয়ে বেশি নরম। অর্থাৎ কাতার সোজা করা বা খালি জায়গা পূরণ করার জন্য কেউ আগ-পর হতে বা ডানে বামে মিলতে বললে বিনয়ের সঙ্গে তা গ্রহণ করে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ২৪৮০
কাতারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা যেকোনো কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। নামাজের কাতারে দাঁড়ানো অবস্থায় এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার কয়েকটি দিক রয়েছে। সেগুলো হলো-
শ্রেণিবিন্যাস ঠিক রাখা প্রাপ্তবয়স্কদের সামনের কাতারে দাঁড়ানো এবং ছোটদের পেছনে দাঁড় করানো। হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.) কোনো বাচ্চাকে (সামনের) কাতারে দেখলে পেছনে পাঠিয়ে দিতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৪১৯২
দাঁড়ানোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ইমামের বরাবর পেছন থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করা। তারপর একজন ডানে একজন বাঁয়ে। এভাবে কাতারের শেষ পর্যন্ত। -হাশিয়াতুত তাহতাবি : ৩০৫
এ বিষয়েও আমাদের অবহেলা হয়। বিশেষত বড় মসজিদগুলোর পেছনের কাতারে মাঝখান থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করে ডান দিকেই সবাই দাঁড়ায়, বাম দিকের খবর নেই। অথবা মাঝখানেরও খবর থাকে না, যেকোনো একপাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায়! যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সামনের কাতার আগে পূর্ণ করা নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করো, অতঃপর তার পরের কাতার। কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে তা যেন শেষ কাতারে থাকে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৭১
এক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা উদাসীন থাকি, দু-কদম দিয়ে সামনের কাতারে যাব, এতটুকু শক্তি হয় না। সামান্য সময় পাখার বাতাস থেকে দূরে থাকব এতটুকু সহ্য হয় না। অথচ নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথম কাতারের ফজিলত যদি তারা জানত; সেখানে দাঁড়ানোর জন্য তারা অবশ্যই প্রতিযোগিতা করত।’ -সহিহ বোখারি : ৭২১
পরিশেষে নবীজীর হাদিস লক্ষ করি। আশা করি তা সামনে থাকলে কাতার সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমতের সঙ্গে তাকে মিলাবেন। আর যে কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমত থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন (বঞ্চিত) করবেন।’ -সহিহ ইবনে খুযাইমা : ১৫৪৯
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। দাপ্তরিক নাম ‘রিপাবলিক অব দ্য নাইজার।’ আফ্রিকার বিখ্যাত নাইজার নদীর নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে। দেশটির মোট আয়তন চার লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল। নাইজারের ২৫ মিলিয়ন মানুষের ৯৯.৩ শতাংশই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শহর নিয়ামি দেশটির রাজধানী। ৩ আগস্ট ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে নাইজার।
নাইজারে ইসলামের ইতিহাস সুপ্রাচীন হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য তাদের প্রধান সংকট। এর পরও দেশটিতে ইসলামি কর্মকাণ্ড থেমে নেই। দেশটির আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সেবা ও রাজনীতি সর্বত্রই সক্রিয়।
দেশের প্রতিটি মসজিদে কোরআন মাজিদ শিক্ষাদানের জন্য মক্তব রয়েছে। বলা হয়, মক্তব নাইজারে কোরআনিক পরিচয়ের প্রতীক। দেশটির বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রেখেছে।
অতীতে মক্তবে পবিত্র কোরআন মাজিদ হেফজ এবং শিশুদের কোরআনের জ্ঞান শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। অনেক দেশে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ঐতিহ্য অতীত থেকে বিদ্যমান ছিল এবং আজও এর প্রচলন রয়েছে।
সম্প্রতি আল জাজিরা নেটওয়ার্ক নাইজারের রাজধানী নিয়ামির মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষক ফাতিমা আহমেদের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে নাইজারের স্কুলগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে।
আল জাজিরা নেট-এর সঙ্গে আলাপকালে ফাতিমা বলেছেন, খলিফা উসমান বিন ফোদিও নাইজার এবং নাইজেরিয়ায় শিক্ষার জন্য প্রথম মক্তব শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। কারণ তখন নানাবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল নাইজার।
সমাজের মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য গোত্রের আলেমদের ইমাম ও সমাজের নেতা হিসেবে বেছে নেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক গোত্রে একটি মসজিদ ও একটি ক্লাসরুম ছিল। এই শ্রেণিকক্ষটি ছিল কোরআন মুখস্থ করার এবং কোরআনিক বিজ্ঞান শেখার জন্য একটি বিশেষ কক্ষ, যা মক্তব নামে সমধিক পরিচিত।
কয়েক শতাব্দী ধরে, হুসা গোত্রের লোকজন কোরআন শিক্ষার এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। মক্তবগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, যেসব ছাত্র সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্ত করত এবং ইসলামি জ্ঞান শিখত- তারা এই ক্লাসরুম এবং মসজিদে থাকতে পারত। এভাবে গত শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ইমাম ও ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যখন এ অঞ্চলের ইতিহাস এক বিরাট পরিবর্তনের সাক্ষী।
নাইজারে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, ফরাসি আগ্রাসন সত্ত্বেও বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রাখে। তারা বিশ্বাস করে যে, ‘শৈশবে কোরআন মুখস্থ করা বা শিক্ষা করা একটি পাথরের ওপর খোদাই করার মতো।’
কোরআনি মক্তবগুলো বন্ধ করার জন্য ফরাসিরা অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক শিক্ষককে মেরে ফেলা হয়েছে, অনেকে প্রাণের ভয়ে দেশত্যাগ করেছেন। এমনকি কোরআন শিক্ষার উপকরণও পুড়িয়ে দিয়েছে ওই সময় সম্পর্কে ফাতিমা এভাবেই বলছিলেন।
বর্তমানে দেশে শত শত মক্তব রয়েছে। যদিও কিছুটা ভিন্ন আকারে এগুলো চলছে। আগে ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেওয়া হতো না, এখন প্রতিটি ছাত্রের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে চারশো ফ্রাঙ্ক (স্থানীয় মুদ্রা) নেওয়া হয় এবং বোর্ডিং এর জন্য আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়।
এখন অনেক তরুণ কোরআন শেখানোর দিকে ঝুঁকছে। তারা দেশটির ঐতিহ্য রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।