মুমিন যেভাবে কাটাবে নতুন বছর

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন যেভাবে কাটাবে নতুন বছর, ছবি: সংগৃহীত

মুমিন যেভাবে কাটাবে নতুন বছর, ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ একটি বছরের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে দিয়ে সন্ধ্যায় যে সূর্যটা কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে নানা কারণে। কারণ আজ বিদায় নিচ্ছে কালেন্ডার থেকে ২০২৪ নামের একটি সাল। আবার রাত পোহালেই জীবনের ক্যালেন্ডারে যোগ হবে নতুন আরেকটি বছর। নতুন বছরে কোনো ধরনের মন্দকাজে না জড়িয়ে মুমিনের অঙ্গীকার হতে হবে আমলময় করার। বিগত দিনের কৃত অপরাধ ও ভুল-ত্রুটির জন্য তওবা করে নতুনভাবে জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করতে হবে।

আলেমরা বলেন, একজন ঈমানদারের নববর্ষ পরিকল্পনা হতে হবে ইসলামি ভাবধারায়। সেই সঙ্গে নিকট-অতীতের সময়পঞ্জির অবস্থা ও অবস্থান পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মুমিন জীবনের দাবি অনুযায়ী জীবন কাটাতে হবে। এর কয়েকটি হলো-

বিজ্ঞাপন

মুমিনজীবন নামাজি জীবন। মুমিন নামাজময় সত্তার প্রতিশব্দ। নামাজময় মুমিন পুষ্প শোভিত ফুলগাছ। নামাজ পড়ে না, এমন মুমিনের শিখরে ফুল নেই, ফল নেই এবং শিকড়ও পোকার আক্রমণের শিকার। নামাজই ঈমানের মূল অনুষদ ও অনুষঙ্গ।

আমাদের কারও নামাজ কাজা থাকলে আদায় করার প্রয়াস শুরু করতে হবে। নামাজের খুশু-খুজু তথা শারীরিক একাগ্রতা ও মানসিক একমুখিতা নিশ্চিত করতে হবে। জামাতের অনুসারী হতে হবে। ফরজ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত নামাজ নিয়মিত আদায়ে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়ত করতে হবে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ার।

বিজ্ঞাপন

ফরজ হলে জাকাত আদায় করে দিতে হবে। জাকাত আদায় না করলে সম্পদ হালাল থাকবে না। হারাম সম্পত্তির কোনো কিছু কবুল হবে না। সহায়-সম্বলের বরকত উঠে যাবে।

আসুন, আমরা অভিজ্ঞ কোনো আলেমের পরামর্শে জাকাত দেওয়ার চেষ্টা করি! জাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ না থাকলে, দান-সদকা করি। সামান্য হোক, সমস্যা নেই।

নতুন বছরে আমরা কোনো মানত বা রোজার কাজা থাকলে আদায় করতে পারি। কাজার জীবন ঋণী জীবন। ঋণগ্রস্ত জীবন সৌভাগ্যের হয় না।

যাপিত জীবনে জানামতো কারো সম্পদ, ইজ্জত বা কোনো শারীরিক ক্ষত বা ক্ষতি হয়ে থাকলে পুষিয়ে দেওয়া জরুরি। আসুন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তের মনস্তুষ্টি আদায় করি এবং ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাওয়া দুর্বলতা নয়, মহত্ত্বের লক্ষণ।

কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করি, শুনি ও বুঝি। কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শেখা জরুরি। কত কিছুই শিখি, কোরআন শিখি না। ভালো কারির তেলাওয়াত শোনাও ইবাদত। বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আরবি না জানলে, অন্য ভাষার গ্রহণযোগ্য তাফসির ও অনুবাদ পড়াশোনা করা উচিত।

হাদিসের পড়াশোনা করা উচিত। অনুবাদে হলেও হাদিসের সঙ্গে পরিচিতি থাকা উত্তম। সিরাত বা প্রিয় নবীকে নিয়ে রচিত বইগুলো পাঠ করা জরুরি। বিশুদ্ধ সিরাত অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী আমাদের অজস্র প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করে দেয়।

দৈনন্দিন মাসয়ালা-মাসায়েল জানা, পড়া ও শোনা জরুরি। প্রাত্যহিক কাজে আমাদের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা অভিজ্ঞ আলেমের কাছে জানা যায়। শুদ্ধ বই পড়া যায়। প্রখ্যাত আলেমের মাসয়ালানির্ভর আলোচনা শোনা যায়।

পবিত্র কোরআন-হাদিসে বর্ণিত প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্থ করা উচিত। এসব জীবনে বরকত সৃষ্টি করে। মাসনুন ও কোরআনিক দোয়ার অভ্যাস থাকলে জীবন শোভামণ্ডিত হয়। ঈমান কল্যাণের বাতিঘর। এর দ্বারা মানুষ ও মানবতার কল্যাণ করা যায়। দেশ ও জাতির কল্যাণ করা যায়। উম্মাহ ও বিশ্বের কল্যাণ করা যায়। প্রকৃতি ও অপ্রকৃতির কল্যাণ করা যায়।

কাজহীন ও পরিকল্পনাহীন থাকা ঈমানের দাবির পরিপন্থী। ছোট হোক বড় হোক, ব্যস্ততায় থাকা অতি উত্তম। ইসলাম বর্ণিত গুনাহের কাজ ও চিন্তা থেকে দূরে থাকা উচিত। পাপ ঈমানিয়াতে কলুষতা ছড়ায়। পাপ থেকে ছলে-বলে ও কৌশলে দূরে থাকতে হবে। তবেই ঈমানে নুর আসবে।

প্রতিবেশী ও পড়শির হক আদায় করা উচিত। ঈমান প্রতিবেশীর হক আদায়কে গুরুত্ব প্রদান করে। আত্মীয়ের খবরাখবর নেওয়া ঈমানিয়াতের কাজ, বিশেষত রক্তের সম্পর্ককে সবিশেষ মূল্য দিতে হবে।

অশ্লীল প্রতিযোগিতা ও হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের পরিবেশকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে। এসব মনোব্যাধি থেকে বেরিয়ে ক্ষমা ও উদারতার চাদরে ঈমানি খুশবু বিলাতে হবে। মুমিন মানুষ বা প্রকৃতির ক্ষতি করতে পারে না। মুমিন মুমিনের ক্ষতিসাধনের কল্পনাও করতে পারে না। আমাদের কারণে যেন মানুষ ও মানবতা ব্যথা না পায়, সেভাবে পথ চলি, সেভাবে কথা বলি!

বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা ঈমানের হুকুম। ছোটদের স্নেহ করা ঈমানের দাবি। সবাইকে ভালোবাসা ঈমানের শান। যার যার অবস্থান থেকে ছোট ও অসহায়দের ভালোবাসি। সামাজিক সংখ্যালঘু মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। প্রত্যেক সৃষ্টির অধিকার বুঝিয়ে দিই! সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।