সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে পূজারীগণকে কিছু নিরাপত্তা পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) পুলিশ সদর দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অমূলক ঘটনা বা গুজব সৃষ্টি করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুলিশকে জানাতে হবে।
পূজামণ্ডপে অসা নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান পথের ব্যবস্থা করা, পূজামণ্ডপে কোনো ব্যাগ, থলে বা পোটলা নিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র স্থাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, পূজামণ্ডপ এবং প্রতিমা বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা এবং স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর অথবা হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি পূজা চলাকালে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও স্বেচ্ছাসেবক লিখিত আর্মড ব্যান্ড প্রদান করাসহ প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম বা নিম্নলিখিত নম্বর সমুহে যোগাযোগ করতে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম: ০২২৩৩৮০৬৬১, ০২২৩৩৮১৯৬৭, ০১৩২০০০১২৯৯, ০১৩২০০০১৩০০; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুম: ০২২২৩৩৫৫৫০০, ০১৮১৭৬০২০৫০; ঢাকেশ্বরী মন্দির সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম: ৯৬১১৩৫৩, ০১৭০৫৫০৫৫২৯; র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কন্ট্রোল রুম: ০১৭৭৭৭২০০২৯; ফায়ার সার্ভিস সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম: ০২২২৩৩৫৫৫৫৫, ০১৭১৩০৩৮১৮১, ০১৭১৩০৩৮১৮২, ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯।
জেলা পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সাথে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট (www.police.gov.bd) থেকে নম্বর সংগ্রহ করুন। যেকোন প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সেবার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ (টোল ফ্রি) নম্বরে কল করুন।
বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাণিজ্য বহুমুখীকরণে চামড়া শিল্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পের অনেক সম্ভাবনা আছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, চামড়া শিল্পের নানাবিধ সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও আছে। আমরা তাদের (ব্যাবসায়ী) সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের ট্যানারি শিফট করা হয়েছে সাভারে। ওখানকার পরিবেশ, অর্থায়ন এবং বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মোট কথা আমরা চামড়াজাত দ্রব্য ও ফুটওয়্যার শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি।
চামড়া শিল্পকে সম্পূর্ণ দেশীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কাঁচামাল দেশীয়, গার্মেন্টসের জন্য বিদেশ থেকে সুতা আনতে হয় তুলা আনতে হয়। চামড়া শিল্পের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের লিংকআপ রয়েছে। আমরা এটাকে উৎসাহিত করবো।
মতবিনিময় সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা,পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ,বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ সফিউল্লাহ, ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদারগুডস এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর মৎস্য ঘের থেকে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৮) ও নাজেম উদ্দিন (৫) নামে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নাজেম উদ্দিন ওই এলাকার ওয়াজ উদ্দিন এবং নজরুল ইসলামের ছেলে। তারা দুইজনই চাচাতো ভাই ও স্থানীয় নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউপির পশ্চিম সিরাদিয়া এলাকায় বাড়ির পাশের একটি মৎস্য ঘের থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.মানিক।
ইউপি সদস্য মোঃ মানিক জানান, সকাল ১০টার দিকে আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নাজেম উদ্দিন খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরিাবরের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে আত্মীয় স্বজনরা। পরে স্থানীয়রা বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য ঘেরের ঝিঁক থেকে মাছ উঠানোর সময় ওই দুই শিশুর লাশ দেখতে পায়। পরে পারিবারিকভাবে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান ওই ইউপি সদস্য।
আল্লাহর ধন আল্লাহ নিয়্যা গেইচে, লাশ কাটি ছিড়ি আর কি লাভ হইবে? আইতত এ্যাটে লাশ থুইলে বিয়ান বেলায় ডোমেরা লাশটাক কাটিয়া কলিজা,ফ্যাপরা সউগে বের করবে। থোয়ার দরকার নাই হামরা গরিব মানুষ বাবা, লাশটাক কষ্ট দেওয়ার থাকি বাড়িত নিয়্যা য্যায়া দাফন করিয়্যা মাটি দেওয়্যা ভালো।
প্রতিবেশীদের এমন মন্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর নগরীতে নিহত মকুল মিয়ার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে এসব বলেন নিহত মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিহত বাবুর্চি মকুলের পরিবার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করায় সরকারি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে মকুল মিয়ার পরিবার।
নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১টায় মকুল মিয়া (৫০) কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কাচারি বাজার আঙ্গুর মিয়ার হোটেল অভিমুখে। পথিমধ্যে সিটি মার্কেটের সামনে গেলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ওপরে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে প্রাণের ভয়ে মানুষ যে যার মতো পালাতে থাকলে মকুল মিয়াও জীবন বাঁচাতে দৌড় দেয়। সে সময় কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর পথচারীরা তাকে চিনতে পেয়ে নিয়ে যায় আঙ্গুর মিয়ার হোটেলে।
৪ আগস্ট ছিল রংপুরজুড়ে রণক্ষেত্র অবস্থা। রিকশা-ভ্যান চলছিল একেবারেই কম। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীর গুপ্ত পাড়ার ভাড়া বাড়িতে। এতে মকুল মিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ভ্যানে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যায় তার লাশ দাফন করেন পরিবার।
ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করার বিষয়টি নিয়ে নিহত মকুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, প্রতিবেশীদের মন্তব্যে লাশটাকে কষ্ট না দিতে পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফন করা হয়। এখন শুনতেছি ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করার জন্য সরকারি তালিকাভুক্ত হয় নাই হামার স্বামীর নাম। আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। আমি এখন তিনটা বেটিক নিয়া কি করিয়া চলব। মুইতো মাইনসের বাড়িত কোন রকমে কাম করি খাওছো। ছাওয়া গুলাক পড়াইম কি দিয়া। খিলাইম কি? কেউ হামার খোঁজ নেয় না।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ এক যুগ থেকে রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া খরমপট্টিতে হারুনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে রংপুর সদরের ময়নাকুটি এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মকুল মিয়া (৫০)।
মকবুল হোটেলের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর থেকে আমার এখানে বাবুর্চির কাজ করেছিল মকুল। তার অবর্তমানে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মকুলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার আহবান করছি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক মিয়া বলেন, নিহত মকুল হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের মৃত্যু সম্পর্কে কোন দাবি না থাকায় ঘটনার দিনেই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। তিন উপজেলার ২১ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। অতিবৃষ্টিতে জেলাজুড়ে মৎসখাতে ৫ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তিন উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের। তবে, এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ধোবাউড়া বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবাজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে হালুয়াঘাটের প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তারা।
জেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, সম্পুর্ণ নিমজ্জিত ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর। হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ৪ হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর, সম্পুর্ণ নিমজ্জিত ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ২ হাজার ১৫০ হেক্টর ও সবজি ৬২ হেক্টর।
আমতৈল গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটে পানি, ঘরে, রান্না ঘরে পানি। কোথায় কোন শুকনা খাবার পেলাম না। তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
কৈচাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, এমন বন্যা আগে কখনও দেখি নাই। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছি, এমন পানি ছিল না। বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। গরু ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। গরু পানির মধ্যে বাধাঁ। আমরা খুব সমস্যা আছি। চলাফেরা খুব সমস্যা, রাস্তায় বুক সমান পানি। ফসলের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়ছে। আমন ধান পানির নিচে পড়ে গেছে। এবার আমন ধান পাবো, এমন আশা করা যায় না। অনেক শাকসবজী জমি তলিয়ে গেছে।
বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সিমান্তবর্তী হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি এসব এলাকায় পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে যেমন প্লাবিত হয়েছে, এরকম পানি বিগত ১৫-২০ বছরে আমরা দেখেনি। এখানে রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, মানুষের বাড়ী ঘর, জমির ফসল গরু ছাগল, হাঁস মুরগী সব নষ্ট হয়ে গেছে। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ করেই পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি, এখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার জন্য। আজকে এখানে বিভাগীয় কমিশনার এসেছিলেন, উনার সাথে কথা বলেছি এবং অন্যান্য প্রশাসনের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ তারা দিবেন। আমরা নিজেদের যা সামর্থ্য আছে সেটা নিয়ে জনগনের পাশে আমরা দাঁড়াচ্ছি। আমরা প্রথম দিন থেকেই মানুষকে উদ্ধার, আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, খাবার বিতরণ করে আসছি। প্রত্যেকটা ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎসচাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও রেনু পোনা ভেসে গেছে ১৪৯ লাখ টাকার। মৎসখাতে মোট ৫ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি আছে। বন্যাদুর্গত মানুষের খাদ্যসহ, যে চাহিদা সে মোতাবেক সরকার আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের সচিব স্যার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাথে কথা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলাগুলোতে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। সবাই একসাথে কাজ করছে। তাদের জন্য রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। সবাই মনে করছি যদি বৃষ্টিটা কমে যায় তাহলে পানি নেমে যাবে তবে বৃষ্টিটা কমছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে আরও একদিন বৃষ্টি থাকতে পারে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।