ফেনীতে বন্যায় কমেছে দুর্গাপূজার আমেজ, চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ফেনীতে ১৪৬টি পূজামণ্ডপে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এ উৎসবটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না ওঠার পাশাপাশি দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পূজা উদযাপনে আমেজ কিছুটা কমেছে।

২ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজার উৎসবকে ঘিরে ফেনীতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিমা শিল্পীরা সেরে নিচ্ছেন শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। পাশাপাশি কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে আগের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ অক্টোবর) সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দেখা গেছে, প্রতিমায় চলছে সাজসজ্জার কাজ। রঙের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রঙে। পূজা ঘনিয়ে আসায় এখন রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছে শিল্পীরা। প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই শিল্পীদের।

দেবী দুর্গা তৈরির কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা জানান, এ বছর পূজায় আমেজ কম। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে মানুষের মনে কিছুটা ভয়ভীতি রয়েছে। যার কারণে আগের থেকে কাজ কমেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসলে বন্যার কারণে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষ মুহুর্তে রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলিসহ সাজ-সজ্জার কাজ চলছে।

ফেনী গুরুচক্র মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শিল্পী সুশীল পাল। তিনি বলেন, এবার ২০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির করছেন। বন্যার কারণে মাটি, বাঁশ খড় পাওয়া যায়নি ঠিকভাবে। প্রতিটি প্রতিমাতে খরচ বাড়লেও কম দামে দিতে হচ্ছে। কারণ সরকার পরিবর্তন, বন্যা সবকিছুর পরে মানুষের পূজা আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। উপযুক্ত দাম না পেলেও ধর্মীয় অনূভুতি থেকে তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

আরেকজন শিল্পী নরেণ পাল বলেন, এখন কষ্ট করছি, কিন্তু দুর্গা মা যখন সম্পূর্ণ সাজে মণ্ডপে বসবে তখন সকল কষ্ট দূর হবে। নিজেকে স্বার্থক মনে হবে। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন। অনেকের মনে ভয়ভীতি কাজ করছে, বন্যা পরবর্তীতে আর্থিকভাবেও পিছিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

ফেনী গুরুচক্র মন্দিরের পুরহিত সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, এবার পূজার আনন্দ ১৪ আনা কমে গেছে। অনেক জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে করে ভয়ভীতি কাজ করে অনেকের মধ্যে। পাশাপাশি ফেনীর বন্যা সবাইকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। পূজা উদযাপনে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

প্রিতুই চক্রবর্তী নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, পূজাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সবাই মিলে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা করছি। পিঠাপুলি ও মিষ্টান্ন বানানোর জন্য সবাই মিলেমিশে কাজ করছি৷ তবে পূজাতে আনন্দ কিছুটা ভাটা পড়েছে। বন্যায় অনেকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে অনেকে।

সম্রাট হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, অন্য বছরের তুলনায় বেচা-বিক্রি অনেক কম। শহরে মানুষের তেমন আগমন নেই। এ বছর পূজা কেন্দ্রিক ব্যবসা হচ্ছে না ঠিকভাবে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলায় ৪৭টি, এরমধ্যে পৌর এলাকায় ১২টি, ফুলগাজী উপজেলায় ৩৩টি, সোনাগাজী উপজেলায় ২৩টি, দাগনভূঞা উপজেলায় ১৯টি, পরশুরাম উপজেলায় ৭টি ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৫টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হীরা লাল চক্রবর্তী বলেন, এবার জেলার ১৪৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। নিরাপদে পূজা উদযাপনে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‍্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা হয়েছে উপজেলা নেতৃবৃন্দের সাথে বর্ধিতসভা করে পূজা উদযাপন পরিষদ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে৷ আগামী ৮ তারিখ ৬ষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে ১২ তারিখ বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।

ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পূজামণ্ডপে র‌্যাব ও পুলিশ ছাড়াও আনসার মোতায়েন করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূজা মন্দিরে পালাক্রমে ডিউটির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিট অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারকে অবহিত করার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা করে করণীয় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা দায়িত্বপালন করবেন। সেনাবাহিনীও কাজ করবে। পাশাপাশি জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।