কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পাটিকাবাড়ি বাজারে ডিমের আড়তে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে ডিম বিক্রি ও বিক্রয় ভাউচার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করার দায়ে একটি প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে সার বিক্রয়ের অপরাধে হালসা বাজারে মেসার্স সুমন ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামাদ এন্ড ব্রাদার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল এ অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে আজ সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি বাজার এবং হালসা বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানকালে দেড় টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রির অপরাধে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি বাজারে লিটন ডিমের আড়ত কে ১০ হাজার টাকা, সরকার নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে সার বিক্রয়ের অপরাধে হালসা বাজারে মেসার্স সুমন ট্রেডার্স কে ১০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামাদ এন্ড ব্রাদার্স কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ীদের ক্রয় ও বিক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে এবং যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জনস্বার্থে এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: আব্দুর রশিদ, জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো: আরাফাত আলী এবং ছাত্র প্রতিনিধি জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে দিনদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৬ জনে। এছাড়া গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ১৮৬ জন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৯৫১ জনে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৫৬ জন রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা বিভাগে ২৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৫ জন, খুলনা বিভাগে ১০৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬৯ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৫ হাজার ৯৫১ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ২২৬ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ।
২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। অপরদিকে এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন। যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।
‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শেখার কোনো শেষ নেই’ তা আবারও প্রমাণ করে দেখালেন কিশোরগঞ্জের মো. বদিউল আলম (নাঈম) ও শারমীন আক্তার দম্পতি। তারা ৪৩ ও ৩৩ বছর বয়সে এসে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দা মো. বদিউল আলম (নাঈম) এবং শারমীন আক্তার বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নাঈম-শারমীন দম্পতির আলোচনা এখন কিশোরগঞ্জবাসীর মুখে মুখে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বামী নাঈম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ এবং স্ত্রী শারমীন পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৫।
পেশায় ঠিকাদার নাঈম কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মো. কনু মিয়া ও মোছাম্মাৎ সাজেদা দম্পতির ছেলে। ১৯৯৭ সালে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। অপরদিকে গৃহিনী শারমীন আক্তার কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন ও মায়া বেগম দম্পতির মেয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তার। ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। ২০০৮ সালে বিয়ে হওয়া এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান আছে।
তাদের বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মেজো ছেলে রেদোয়ান আলম সিয়াম একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে তাসনীম (৫) এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।
এ দম্পতি জানান, ২০২০ সালে বড় মেয়ে বীথি ও তৎকালীন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনার উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাদের।
ওই বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তারা দুজন বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় নাঈম জিপিএ ৪ দশমিক ৯৫ এবং স্ত্রী শারমীন জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।
বদিউল আলম (নাঈম) বলেন, বিয়ের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যবসা ও সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।
শারমীন আক্তার বলেন, মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে পড়াশোনা করে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন।
এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরে তারা নিজেরা আনন্দিত হওয়াসহ তাদের পরিবারে যেমন আনন্দের বন্যা বইছে, তেমনি এলাকার লোকজনও খুশি হয়ে তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে বলে জানালেন এই দম্পতি।
লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। বদিউল আলম ও শারমীন আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। তারা কলেজে নিয়মিত ছিলেন এবং লেখাপড়ায়ও মনোযোগী ছিলেন। আমি প্রায়ই ক্লাস রুমে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতাম। ব্যবসা-সংসার সামলিয়ে যে পড়াশোনা করা যায় এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
চাঁদাবাজি, হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন পুলিশ কর্মকর্তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল আদালতের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলি আদালতের বিচারক বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল হক এই আদেশ দেন।
এর আগে চাঁদাবাজি, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ডা.মোহা. ইসমাইল হোসেন । তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নয়াগোলাহাট এলাকার বাসিন্দা ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারি) হিসেবে কর্মরত আছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, গোমস্তাপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক উপপরিদর্শক আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ ও কনস্টেবল খাদেমুল ইসলাম। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ ডা. ইসমাইল হোসেনকে বিভিন্ন সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবী করেন। ডা. ইসমাইল চাঁদা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে গত ২০১৯ সালের ১২ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শান্তিমোড় এলাকায় অবস্থিত সেবা ক্লিনিকে ডা. ইসমাইল হোসেনকে গালিগালাজ করে সাবেক এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ সার্টের কলার চেপে ধরে মারধর করে। পরবর্তী সময়ে ডা. ইসমাইলকে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রনি করেন।
মামলার বাদী ডা. ইসমাইল হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ডিবির সাবেক এসআই জাহিদ বহু দিন যাবত চাঁদা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলো। আমি তাকে চাঁদা না দিলে সেবা ক্লিনিকে আমার ওপর হামলা করে। তার সহযোগী পুলিশ কনস্টেবল খাদেমুল সেও আমার ওপর হামলা করে। এই হামলার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ আমার কাছে সংগ্রহ করা আছে। আমাকে আরও বেশি হয়রানি করার জন্য সেই সময়ের গোমস্তাপুর থানার ওসি জসীম উদ্দিনকে দিয়ে আমার অফিসে হানা দিয়েছিল। আমাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিল। এছাড়া বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছিল।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দীকি আসাদ বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।