বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পালাচ্ছে আ. লীগ নেতারা

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, বেনাপোল(যশোর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সব ছাত্র-জনতার ওপর যে স্বেচ্ছাচারি ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে ও নির্বিচারে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্তরা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। অভিযুক্তদের পালাতে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করছে সীমান্তের এক শ্রেণির পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

গত দুই দিনে বেনাপোল সীমান্তের চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে আ. লীগের দুই শীর্ষ নেতা পুলিশ, বিজিবি ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেফতার করেছে। আবার এসব নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে অনেকে ঢুকে পড়েছে ভারতে। তবে সিসি ক্যামেরায় অপরাধী পারাপারে সহযোগিতাকারীদের পরিচয় সনাক্ত করা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী প্রক্রিয়া না নেওয়ায় অপরাধী পালানো থামছেনা।

বিজ্ঞাপন

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্তের পরিবহন কাউন্টার ম্যানেজারদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যাদের আন্ডারওয়ার্ল্ড পর্যন্ত হাত রয়েছে।পাসপোর্টধারীদের সেবা দেওয়ার নাম করে এদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে অবাধ বিচরনের সুযোগ দেয় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এ সুযোগের আড়ালে তারা অপরাধমূলক কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এদের হাত ধরে গত এক মাসে অন্তত শতাধিক অপরাধী সীমান্ত পার হয়েছে। এসময় তাদের অবৈধ ১০০ কোটিরও বেশি টাকা এই চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ভারতে।

সবশেষ গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে শেরপুর জেলা আ. লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় একাধিক মামলা ছিল। তার বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থায় বিগত সরকারের পক্ষ নিয়ে নিরপরাধ বিরোধী দলের মানুষকে হয়রানি করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসময় কৌশলে ভারতে ঢুকে পড়েন তার আরেক সাথী রয়েল কোচ পরিবহনের মালিক সঞ্জয় কুমার কুন্ড। ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে এদের পারাপারে সহযোগিতা করছিল স্থানীয় চক্রটি।

একদিন পর বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আবারো ভারতে পালানোর সময় ফতুল্লায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কিশোর আদিল হত্যা মামলার আসামী আ. লীগ নেতা রুস্তম খন্দকারকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে কৌশলে পালিয়ে যায় তাকে পাঠাতে সহযোগিতাকারীরা। তিনি ফতুল্লা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিভিন্ন মামলার আসামী রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদেরকে সংশিষ্ট থানা গুলোতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া কাস্টমসের বন্ধ গেট খুলে কৌশলে ভারতে পাঠানোর সময় এর আগে ইমিগ্রেশনে গ্রেফতার হয় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব (৩৫)। এছাড়া তথ্য গোপন করে ভারতে ঢোকার সময় এক বিজিবি সদস্যও আটক হয়েছিল ইমিগ্রেশনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তের একাধিক সূত্র থেকে আরো জানা যায়, বর্তমানে বৈধ পথেই অপরাধীরা বেশি পালাচ্ছে ভারতে। ভারত এসব অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ায় তাদের কেউ অনিয়ম করে ভারতে গেলেও সেখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহীনি ধরছেনা। কলকাতা শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বিচরন করছেন। অনেক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী তাদের সেখানে চলাফেরা করতে দেখেছেন। অভিযোগ আসছে এরা পালানোর ক্ষেত্রে বৈধ পথে রুট ব্যবহার করছে ভারতীয় ট্রাক, চেকপোষ্ট শূন্য রেখায় রিট্রিট সিরোমনিতে সাধারন মানুষের সাথে প্রবেশ করে আবার কেউ চেকপোষ্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনের বন্ধ গেট খুলে।

শার্শা উপজেলা ছাত্রদলের আহবাহক শরিফুল ইসলাম চয়ন জানান, তারা বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছেন, সীমান্তে প্রভাবশালী কয়েকজন পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সম্প্রতী বিভিন্ন মামলার আসামীদের ভারতে পালাতে সহযোগিতা করছে। আর ঐসব অপরাধীরা ভারতে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অধরাধীদের ভারতে পালাতে যারা সহযোগিতা করছে এসব পরিবহনের অভিযুক্তদের ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি ফারুক মজুমদার জানান, কোন অপরাধী যাতে ভারতে পালাতে না পারে ইমিগ্রেশনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে ভারতে পালানোর সময় বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী বেশ কয়েকজন গ্রেফতার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এদের যারা পালাতে সহযোগিতা করছিল তাদের বিরুদ্ধে সিসি ক্যামেরা দেখে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।