টিউশন ফি দিয়ে ৫০০ প্রজাতির গাছ নিয়ে ছাদবাগান 

  • মোঃ আব্দুল হাকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টিউশন ফি দিয়ে ৫০০ প্রজাতির গাছ নিয়ে ছাদবাগান, ছবি: বার্তা২৪.কম

টিউশন ফি দিয়ে ৫০০ প্রজাতির গাছ নিয়ে ছাদবাগান, ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজশাহীর বিহাস চোদ্দপায় এলাকার শারমিন আক্তার। টিউশনি ফি দিয়েই গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান ‘ন্যাচারস টাচ’। সেই বাগানে আজ ৫০০’রও বেশি প্রজাতির গাছ গড়ে উঠেছে। তার স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং সাহসের ফলে আজ এই সবুজ সাম্রাজ্য সবার নজর কেড়েছে।

শারমিনের বাগানের পেছনের গল্পটি শুরু হয়েছিল ছোটবেলায়। টিফিনের টাকা জমিয়ে কেনা শুরু করেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পরে বিয়ে হলে স্বামীর কাছে গাছ কেনার জন্য আবদার করতেন। পড়াশোনার টিউশন ফি বাবদ কিছু টাকা প্রয়োজন হলে, তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা চাইতেন। তিনি ৫ হাজার টাকা চেয়ে ১০ হাজার নিতেন, আর সেই বাড়তি টাকায় কিনতেন গাছ। কসমেটিক কেনার নামেও তিনি বাড়তি টাকা নিতেন।

বিজ্ঞাপন

শারমিন জানান, একবার ১৬ হাজার টাকা লাগবে বলে ২৫ হাজার টাকা চান। সেই বাড়তি ৯ হাজার টাকার গাছ কিনেন। এভাবেই তার গাছ সংগ্রহের শুরু।

শুরুতে শারমিনের বাগানটি ছিল সাধারণ, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিশ্রমের ফলে তা বিশাল আকারে পরিণত হয়। এখন তার নার্সারিতে ৫০০’রও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। তিনি মূলত থাইল্যান্ড থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করেন। দেশের বড় বড় বিক্রেতাদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ধরনের গাছ। তিনি জানান, তার কাছে সবচেয়ে কম মূল্যে গাছ কিনতে পারবেন ক্রেতারা। অন্য কোথাও ১০০ টাকায় গাছ পেলে, তার কাছে সেটি ৭০ টাকায় পাওয়া যাবে।


শারমিন শুধু গাছের ব্যবসা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রেখেছেন। তার নার্সারিতে গাছ কিনলে ১০০ টাকার গাছ কিনলে উপহার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন গাছ সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তাই আমি এখন ছাত্রদের সাহায্য করতে চাই।

শারমিন আক্তার বলেন, আমার নার্সারি ‘ন্যাচারস টাচ’ গড়ে তোলার পেছনে অনেক কষ্ট ও স্বপ্ন রয়েছে। যখন আমি টিউশনের ফি দিয়ে গাছ কিনতে শুরু করি, তখন চিন্তা করিনি যে এটি একদিন এত বড় আকার ধারণ করবে। আমি শুধু জানতাম, গাছ আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং আমি চাইতাম মানুষকে এটি সম্পর্কে সচেতন করতে। আমি কখনো ভাবিনি যে, আমার সংগ্রহে ৫০০ প্রজাতির গাছ থাকবে।

গাছের যত্ন নিতে আমি নিজের হাতে কাজ করেছি এবং আমার স্বামীও আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমরা একসাথে কাজ করে গাছগুলোর যত্ন নিই, এবং আমি বিশ্বাস করি যে, এটাই আমাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি। আমি ছাত্রদের বিশেষ সুবিধা দিতে চাই, কারণ আমি জানি, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন গাছ কেনার জন্য কষ্ট হয়েছে। আমার নার্সারিতে আসা প্রত্যেকের জন্য আমি চেষ্টা করি যেন তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো গাছ পায়।


আমার লক্ষ্য শুধু ব্যবসা করা নয়, বরং সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তরুণদের মধ্যে গাছের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। আমি বিশ্বাস করি, গাছ লাগিয়ে আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারব।

শারমিনের আরেকজন ক্রেতা নূর জাহান প্রভা বলেন, আমি ফেসবুক থেকে শারমিন আপুকে চিনেছি। আমার কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, তাই তাকে ছবি পাঠিয়ে সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি খুব সুন্দরভাবে আমাকে পরামর্শ দিলেন এবং তার বাগান থেকে গাছ নিয়ে অনেক উপকার পেয়েছি।

মাহফুজুর রহমান নামের আরেক জন ক্রেতা বলেন, শারমিন আপুর নার্সারি দেখে আমি অবাক হয়েছি। এত বড় এবং এত সুন্দর বাগান, আর এত সাশ্রয়ী দামে গাছ, যা সত্যিই অসাধারণ। আমার জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। আমি ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও গাছ কিনতে চাই।


এগ্রোনিমা নার্সারির ক্রেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি প্রথমবার এখানে এসেছি। গাছের দাম এবং গুণগত মান দেখে আমি খুবই সন্তুষ্ট। শারমিন আপু আমাকে গাছের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিলেন। তিনি সত্যিই অনেক সাহায্য করেন। আমি তার বাগান সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে চাই এবং ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও গাছ কিনব।