বন্যায় বিপর্যস্ত দাগনভূঞায় আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ ভাগই ঘাটতি
ফেনীর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে দাগনভূঞা উপজেলার কৃষিতে। যদিও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেরিতে হলেও জমিতে রোপা আমন চাষ করে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবারের মৌসুমে উপজেলা রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ ভাগ পূরণ হয়েছে। উপজেলার ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বন্যার কারণে কেবল ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা জমি ধানের পরিচর্যা ব্যস্ত সময় পার করছে। বন্যা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছে কৃষকরা। কৃষক মহিন উদ্দিন ৩০৬ শতক, একরাম উদ্দিনের ১৩২ শতক, ইদ্রিস ১২০ শতক, আবদুর ছোবহান ৭২ শতক, মীর আহাম্মদ ৬০ শতক, বিবি মরিয়ম ৬০ শতক, আবু ইউছুফ ৬৫ শতক, নূরুল আমীন বাচ্চু ৫৫ শতক জয়নাল আবেদীন ৫০ শতক সানোয়ারা বেগম ৪৮, বিষ্ণু চন্দ্র ভৌমিক ৩৬ শতক ও কালন ৩০ শতক জমিতে ব্রি ধান ৯৫, ৪৯ ও ৮৭ জাতের ধান আবাদ করেছে।
কৃষকরা জানান, বন্যায় জমির ধানগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ধানের চারাগুলোতে সার কীটনাশক দিয়েও লাভ হয়নি। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ধানের চারা পেয়ে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।
স্থানীয় কৃষক মীর আহাম্মদ জানান, প্রতি বছর ২০০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করি। বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমিই খালি রয়েছে। এ মৌসুমে ঘরের খোরাকি কীভাবে মেটাব সেটিই চিন্তা করছি। এবারের বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
আবু ইউছুফ নামে আরেকজন বলেন, বন্যা পরবর্তী কৃষিখাতে এ বছর যে ক্ষতি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমরা কৃষিকাজ করেই সংসার চালাই। সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৬৫ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। যা দিয়ে কোনোভাবে নিজে খেতে পারব।
কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, দাগনভূঞা উপজেলায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি বিভাগের ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯ হাজার ৮৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৯৩৪ হেক্টর ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ১০ হাজার ৩৫৩ জন কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আউশ আবাদ করেছিলেন ৯২০ জন কৃষক, আমন বীজতলা করেছেন ৭ হাজার ৫৪৩ জন, আমন আবাদ ৬৫০ জন, শরৎকালীন সবজি ১ হাজার ১৮৫ জন, ফলবাগান ৪৫ জন ও আদা চাষ করেছেন ১০ জন কৃষক।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বন্যা পরবর্তী কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ধানের চারা বিতরণ করা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদি ব্রি ধান ৯৫ জাত রোপণের ১২০ দিন পর ফসল ঘরে তোলা যায়। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ধান কর্তন করা যাবে। মাঠে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, বন্যায় কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের মাঝে শীতকালীন সবজি বীজ, ধা