গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসাপিয়ারেন্স) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় বিকেল সাড়ে ৫টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে সেগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত বোধ করবেন ও অভয় পাবেন বলে জানান তারা। আজ বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এমনকি ছয় বছরের শিশুকেও গুমের বর্ণনা কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান তারা।
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের তদন্তে যে ঘটনাগুলো উঠে এসেছে তা গা শিউরে ওঠার মতো। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।’
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার হিমাগ্রীপাড়ায় গুলিতে আহত নারী উমেপ্রু মারমার মারা গেছেন। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল পাঁচ দিন চিকিৎসার পর শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নিহতের দেবর অমিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, গতকাল সকাল থেকে তলপেটে গুলিবিদ্ধ উমেপ্রু মারমার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তার মরদেহ এখনো চট্টগ্রামের হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ প্রথমে বান্দরবানের বালাঘাটায় তার শ্বশুরবাড়িতে আনা হবে। সেখান থেকে বান্দরবান-ওয়াইজংশন-রুমা সড়কের হিমাগ্রীপাড়ায় নিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হবে।
নিহত উমেপ্রুর ভাই উসাইমং মারমা বলেন, তার বোন হিমাগ্রীপাড়ায় তাঁদের বাড়িতে (বাবার বাড়ি) দুই মেয়ে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে খামারে যাওয়ার পথে হঠাৎ ছুটে আসা গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তবে কে বা কারা কেন তাকে গুলি করেছে, তা তারা জানতে পারেননি। বোনের মা হারা দুই মেয়ে এখনো হিমাগ্রীপাড়ায় তাদের বাড়িতে রয়েছে। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
রোয়াংছড়ি থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের লোকজন এলে হত্যা মামলা করা হবে। তখন তদন্তে জানা যাবে কে বা কারা তাকে গুলি করেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে হরিণের। দিন দিন সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বাড়লেও কমছে না হরিণ শিকারের সংখ্যা। প্রতিনিয়তই বন রক্ষাকারীদের হাতে ধরা পড়ছে বস্তাসমেত হরিণের মাংস।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) জরিপের তথ্য মতে, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজারটি। সেই হিসেবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪টি।
প্রধান বন সংরক্ষক ( খুলনা অঞ্চল ) মিহির কুমার দো বলেন, কয়েক বছরে বনের জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন এসেছে। এখন সুন্দরবনে গেলেই হরিণ দেখা যাচ্ছে, যা আগে ছিল না। হরিণের সঙ্গে বাঘও দেখতে পাচ্ছেন সুন্দরবন দর্শনার্থীরা।
হরিণের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বন বিভাগের নিয়মিত টহল এবং বনে দস্যু কম, পাশাপাশি রাসমেলা বন্ধ হওয়ার কারণে হরিণ শিকার আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বনে সারা বছরই দস্যুরা এবং বছরের শেষের দিকে দুবলারচরে রাসমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আসত। ওই সময় বিপুল পরিমাণ হরিণ শিকার করা হতো। অল্প লোকবল দিয়ে এত মানুষের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হতো না।
এদিকে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সুন্দরবনে হরিণ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত এক মাস ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কয়েকটি চোরা শিকারি চক্র। গরু ও খাসির মাংসের তুলনায় হরিণের মাংসের দাম কম হওয়ায় সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকায় এই বন্যপ্রাণীর মাংসের চাহিদা বাড়ছে। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠছে শিকারি চক্র।
খুলনার সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘ হত্যা কিছুটা কমলেও একেবারে তা বন্ধ হয়নি। আর বাঘের প্রধান খাবার হরিণ শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অধ্যাপক কাদির আরও বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। যে পরিমাণ হরিণের মাংস ও চামড়া আটক হয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়। মাঝেমধ্যে দুই একটি অভিযানে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা উদ্ধার হলেও মূল চোরাশিকারি ও পাচারকারীরা আটক হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হরিণের মাংস বহনকারীরাই ধরা পড়ে। আর যারা আটক হন, তারা দুর্বল আইনের কারণে কয়েকদিন পর জেল থেকে ফিরে একই কাজ করেন।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শুভ্র শচীন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আটক হরিণ শিকারিদের তথ্যে দেখা গেছে বনের পাশে যাদের বাড়ি, তারাই বেশি হরিণ শিকারের সঙ্গে যুক্ত। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জসংলগ্ন গ্রামগুলোয় দেড় শতাধিক শিকারি দল রয়েছে। বিশেষ করে খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর এবং বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলার মানুষ বেশি হরিণ শিকার করে।
নওগাঁয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৯টি পরিবারের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে মোট ১৮ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়েছে।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের আর্থিক সহায়তায় এসব চেক বিতরণ করা হয়।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা: নজরুল ইসলাম, শহীদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুল মাখমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, আরমান হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জানান, নওগাঁ জেলার ৯ জন শহীদের প্রত্যেকের নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে। তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও পরিবারগুলোর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদান করা হবে।