এলএনজি কেনার দরপত্রে সাড়া মিলছে না, চিন্তায় পেট্রোবাংলা
দফায় দফায় দরপত্র আহ্বান করে স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির জন্য দরদাতা পাচ্ছে না পেট্রোবাংলা। সর্বশেষ পৃথক ৩টি দরপত্রে প্রয়োজনীয় (কমপক্ষে ৩টি) দরপত্র জমা না হওয়ায় বাতিল করার কথা জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপরেশন এন্ড মাইন্স) কামরুজ্জামান খান।
পেট্রোবাংলা সুত্র জানিয়েছে, আগামি ৮ জানুয়ারি এলএনজি সরবরাহের জন্য সর্বশেষ দরপত্র আহ্বান করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। এ দফায় কোন প্রতিষ্ঠানেই দরপত্র জমা দেন নি। এর আগে ১ জানুয়ারির জন্য নির্ধারিত দরপত্রে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। তার আগে ২৫ ডিসেম্বরের জন্য আহূত দরপত্রে মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান দর জমা দেয়। কিন্তু পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল) অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ জন প্রতিযোগি না থাকলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পিপিআর এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে রি-টেন্ডার করার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও অনেক কমে দরপত্র জমা পড়েছিল, এটা নিতে পারলে আমাদের অনেক সাশ্রয় হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা দ্রুততার সঙ্গে রি-টেন্ডারে যাচ্ছি। আশা করছি বড় কোন সংকট হবে না।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ এর আওতায় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই আইনের আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে সরবরাহকারীর তালিকা প্রস্তুতের জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয় ২০১৭ সালে। নির্ধারিত সময়ে দাখিল করা ১৭টি প্রতিষ্ঠান এসএসপিএ অনুস্বাক্ষর করলেও ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় পেট্রোবাংলা। যা পরবর্তীতে ২৩টিতে উন্নীত করা হয়। তাদের মধ্যে থেকে স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনে আসছে বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ বিধান আইনের মাধ্যমেও কিনলেও অন্তবর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান ঘোষণা দিয়েছেন, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া কোন কেনাকাটা করা হবে না। তারপর থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কয়েক কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা।
কিন্তু ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধ ও জানুয়ারির প্রথমার্ধের জন্য কোন আগ্রহী দরদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পেট্রোবাংলা। এমনিতেই দেশে গ্যাসের ব্যাপক ঘাটতি রয়ে গেছে। এমন সময়ে যদি স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা না যায় তার প্রভাব খারাপ হতে পারে।
কেনো আগ্রহী পাওয়া যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপরেশন এন্ড মাইন্স) বার্তা২৪.কমকে বলেন, শীতকালে এমনিতেই এলএনজির চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময়ে এই পণ্যটির পাওয়া একটু কঠিন হয় সে কারণ এখানে ভূমিকা রাখতে পারে।
তালিকাভূক্ত ২৩ প্রতিষ্ঠান কিছু কি জানিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, না তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় নি। এটা তাদের ব্যবসার কৌশল হতে পারে।
এক প্রশ্নের জাবাবে বলেন, আমাদের প্রতিশ্রুত গ্রাহকের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫ হাজারের মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সবগ্রাহক যেহেতু একসঙ্গে ব্যবহার করে না, তাই দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন চাহিদা বিবেচনা করা হয়। এর বিপরীতে আমরা ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো সরবরাহ দিচ্ছি।
গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৪২৯ কার্গো (১ কার্গো= ৬১ হাজার ৫০০ মে. টন) এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২৪৪ কার্গো, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ওমান থেকে ১১৬ কার্গো এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ৬৯ কার্গো আমদানি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ১৯ কার্গো আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে স্পর্ট মার্কেট থেকে মাত্র ২ কার্গো।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। তখন ৬ থেকে ৭ ডলারে পাওয়া যেতো প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সেই এলএনজির দাম ৬২ ডলারে গিয়ে ঠেকে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে বাংলাদেশ। বর্তমানে কমবেশি ১৫ ডলার খরচ পড়ছে এলএনজি আমদানিতে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে বছরে ৮০টি কার্গো হ্যান্ডেলিং করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। এরমধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায়। আর খোলা বাজার থেকে ২৪টি কার্গো আনার সুযোগ রয়েছে।
শুধু স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি নয় এর আগে বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মেলেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডাকা দরপত্রে ৭টি বহুজাতিক কোম্পানি দরপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমাদান থেকে বিরত থেকেছে।
কেউ কেউ মনে করছেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করছেন। আবার ক্ষেত্র বিশেষে পেমেন্ট বিলম্ব হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।