বাংলাদেশে একটাই ইজতেমা হবে: মুফতি আমানুল হক
বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাবলীগের শূরায়ে নিজামের সদস্য মুফতি আমানুল হক। সরকারও এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
মুফতি আমানুল হক বলেন, রাতের আঁধারে লেবাসধারী সাদপন্থি হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা ধারালো চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের চার শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
আগামীকাল ইজতেমা ময়দান অভিমুখী লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে মুফতি আমানুল হক বলেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যে যদি সাদিয়ানি বাহিনী মাঠ ছেড়ে না দেয় তাহলে আগামীকাল সারা দেশ ও ঢাকার ৮ পয়েন্ট থেকে আমরা লংমার্চ করে টঙ্গীর মাঠে গিয়ে সমবেত হয়ে জোহরের নামাজ আদায় করব। তারা যদি মাঠ ছেড়েও দেয় আমরা লং মার্চ না করলেও তাদের নামে হত্যা মামলা করবো। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।
এসময় ওয়াসিফুল ইসলাম, ওসামা, আব্দুল্লাহ মনসুর, আজিম উদ্দিনসহ মোট ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তাবলীগ জামায়াতের এই শীর্ষ মুরুব্বী। তিনি বলেন, সরকার তাদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিক যাতে তারা আর এমন ফেতনা না করতে পারে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা বিপদের মুখে ফেলে দেওয়ার চক্রান্তের বীজ হলো সাদিয়ানী বাহিনী। তারা ভারতের দ্বারা ব্যবহার হচ্ছে। কারণ তাদের আমির ভারতের। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই তাদের বিচার করা হোক। এই কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীতে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো সাদিয়ানীকে আসতে দেওয়া হবে না।
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, জামায়াতে তবলীগের বিভক্তিটা মূলত আমাদের দেশের নয়। এই বিভক্তিটা হলো ভারতের। সারাবিশ্বে দাওয়াতে তবলীগের কাজ এক হয়ে চলছিলো। কিন্তু মাওলানা সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে বিশ্বের প্রতিটি দেশ, শহর, নগর, মসজিদ এবং বাড়িতে বিভক্তি হয়েছে। দাওয়াতে তাবলীগের প্রতিটি ঘর বিভক্ত তার কারণে বিভক্ত।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের ৫ দিনের জোর (কর্মী সম্মেলন) ছিলো। আমাদের জোর করার পর তাদের (সাদপন্থী) জোর করার ইচ্ছা হয়। তারা আমাদের জানায় তারাও জোর করবে। আমাদের কাছে প্রশাসনিক প্রজ্ঞাপন ছিলো, ইজতেমা মাঠ আমাদের কাছে থাকবে। ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি আমরা ইজতেমা করব এবং ৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় আমরা সরকারের কাছে মাঠ হস্তান্তর করব। সরকার তাদেরকে ইজতেমা করার সুযোগ দিবে। পরে আবার মাঠ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, এজন্য সরকার চিন্তা করেছিলো আমাদের সাথে বসবে। আমাদের কাছে অনুমতি চাইবে। তাই সরকার হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে তাদের কাছে পাঠায়। ওয়াসিফুল ইসলাম, তার ছেলে ওসামা, আব্দুল্লাহ মনসুরসহ কয়েকজন সমন্বয়দের সাথে একটা বৈঠক করে। সেখানে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ তাদের আশ্বস্ত করে, তারা প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের মাঠ নিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য আগামী ২০ তারিখ থেকে ৫ দিনের জোর (কর্মী সম্মেলন) করে মাঠ আবার ফেরত দিয়ে দেওয়ার শর্ত দেয়া হয়। এতে তারা সম্মতি জানায়। এর ভিত্তিতে গতকাল শেষ রাতে সারজিস ও হাসনাত কাকরাইল মসজিদে আসে আমাদের মুরুব্বিদের সাথে আলাপ করতে। আমাদের সাথে তখন আলাপ চলছিলো। এসময় টঙ্গীর ময়দানে হামলা চালানো হয়। এমনভাবে মেরেছে যেভাবে কোনো পশুকেও মারা হয় না। ঢাকা মেডিকেলে ৪০ জন আহত রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। আরও বিভিন্ন হাসপাতালে আহত অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০০ জন সাথী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।