ময়মনসিংহে ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, দুদকের অভিযান

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দুদকের অভিযান/ছবি: সংগৃহীত

দুদকের অভিযান/ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় এডিপি'র ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে জেলা দুদকের কর্মকর্তারা। পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে দুদক।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ দুদকের সহকারি পরিচালক বুলু মিয়া প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৮টি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৭৫ লাখ টাকা। ৮টি প্রকল্প দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কোনো প্রকল্পের কাজই হয়নি। প্রকল্পের কাজ হয়েছে তা খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কিন্তু সব ক'টি প্রকল্পের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদের এডিপি'র বরাদ্দের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে।

প্রকল্পগুলোর হলো ইছাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ, অন্নেশন উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (এইচবি) করণ ১০ লাখ, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ১০ লাখ, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

ওই ৮টি প্রকল্পের কাজ ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ দিয়ে তা না করে টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ, উড়ালাল এন্টারপ্রাইজ। গত ২৫ জুন ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

সম্প্রতি ৮টি প্রকল্প এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো প্রকল্পে কাজই হয়নি। অথচ কাগজে কলমে সব ক'টি প্রকল্পই বাস্তবায়িত দেখানো হয়েছে। অন্বেষণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য যে কাজ করার কথা ছিল, তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন খান বলেন, আমি বরাদ্দের বিষয়ে জানতাম না, গত কয়েকদিন আগে শুনেছি, আমাকে ইঞ্জিনিয়ার অফিস বলেছে পানির সাপ্লাই লাইন করে দিবে আমি না করে দিয়েছি। উপস্থিত অভিভাবকগণ বলেন, সরকারি টাকা এভাবেই কাজ না করে আরও অনেক টাকা খেয়েছেন।

ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের নামে কাজ কিছুই হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নজিবা আক্তার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না, গত ৮ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একজন আমাকে জানায়, পরে আমি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গিয়ে দেখব পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বসে আছেন। এসময় প্রকৌশলী আমাদের জানায়, আপনাদের জন্য সরকার থেকে কিছু বরাদ্দ আছে। আমাদের চেয়ার, টেবিল, একটি ল্যাপটপ দেবেন। তবে, এসব বিষয়ে আমি কিছু না বলে আমার নামে ১০ লাখ টাকার প্রকল্প আছে, টাকা উঠিয়ে ফেলেছেন কীভাবে? আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন না কেন? কাজের বিলে সই-স্বাক্ষর নিলেন না। তাহলে কীভাবে হলো অবশ্যই আমার সই স্বাক্ষর জাল করে এসব করেছেন।

সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। কলেজ শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, যাদের মন-মানসিকতা নোংরা তারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করতে পারে এবং তারাই পদোন্নতি পায়। ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালালের সম্পৃক্ততা থাকায় আমরা কিছু বলিনি।

এবিষয়ে জানতে উড়ালাল এন্টারপ্রাইজের মালিক সজিবের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ দেখায়।

প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের বিশ্বজিৎ বলেন, ৮টি প্রকল্পের মাঝে ৩টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, কোনো কাজ হয়নি ঠিক, তবে টাকা আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সকল টাকা পে-অর্ডার করে রেখেছি। টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। ৭৫ লাখ টাকার মাঝে ২৫ লাখ টাকার হিসাব ইউএনও জানেন।

এবিষয়ে উপজেলা নিবার্হুী কর্মকর্তা (বদলিকৃত) কাবেরি জালাল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ময়মনসিংহ দুদকের সহকারি পরিচালক বুলু মিয়া বলেন, উপজেলা ৮টি প্রকল্পে জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশনের অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে আমরা আজকে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ প্রকল্পে আমরা সরজমিনে যাচাইবাছাই করছি। যাচাই কালে আমরা অভিযোগে সত্যতা পেয়েছি। দেখা গেছে যে, কোন কোন জায়গায় কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে এবং কোন কোন জায়গায় কাজ এখনও চলমান দেখিয়ে পূর্বেই টাকা উঠিয়ে নিছে। বিশেষ করে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজ আমরা দেখেছি আপনারা ও দেখেছেন, এখনও কাজ চলমান, অথচ বিল অনেক আগে তুলে নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের পিছনে যে এইচবিপি রাস্তাটা রয়েছে আমাদের কাছে দেখে মনে হয়েছে অনেক আগের দু-এক জায়গায় সংস্কার হয়েছে। সংস্কার হওয়া মানেই রাস্তাটা অনেক আগের তার উপর ঘাস হয়ে গেছে। প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে পায়নি। তিনি সম্প্রতি বদলী হয়ে অন্য জায়গা চলে গেছেন। উনার দায়িত্বে বর্তমানে ভূমি কমিশনার রয়েছেন। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে এবং উপজেলা প্রকৌশলী ময়মনসিংহে অফিসিয়াল কাজে আছেন। আমরা যা পেয়েছি। সে রেকর্ড অনুযায়ী কমিশন বরাবর দাখিল করবো কর্তপক্ষ যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।