নরসিংদীতে সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার

সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার

নরসিংদীতে শাক-সবজি আবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কীটনাশক। কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় এটি ব্যবহার করছেন। ফলে শাক-সবজির স্বাদ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি এটি মানবদেহের ক্ষতি করছে। কৃষকরা জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের পরদিনই ক্ষেত থেকে ফসল তুলে বিক্রি করে থাকেন। কীটনাশক ব্যবহারের কমপক্ষে ৭ দিনের মধ্যে ফসল তোলার নিয়ম না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। চিকিৎসকরা বলছেন এই থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, তা না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

সবজির জেলা নরসিংদী, দেশের সবজির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নরসিংদীর সবজি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই সবজি কতটা নিরাপদ? যেখানে জৈব সার প্রয়োগে এবং ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করে সবজির আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। সেখানে অতিরিক্ত লাভের আশায় আগাম ফলন পেতে কৃষকরা সবজিতে ব্যবহার করছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক থিয়োভিট, ফ্লোরা এবং হরমোন ওকোজিম নামক কীটনাশক।

বিজ্ঞাপন

কৃষকদের মতে, আগাম সবজি তুলে বাড়তি লাভের আশায় এসব ব্যবহার করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ ও চিকিৎসকদের মতে, কীটনাশক ছিটানোর সঙ্গে সঙ্গেই জমি থেকে সবজি তোলার নিয়ম না থাকলেও এক-দুদিনের মধ্যেই জমি থেকে সবজি তুলে বিক্রি করে থাকেন। সবজি চাষের ক্ষেত্রে কৃষকরা বেগুন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম ও কাঁকরোল জাতীয় সবজিতে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই কীটনাশনের বিষক্রিয়া পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। কীটনাশক ব্যবহারের কমপক্ষে ৭ দিনের মধ্যে সবজি তোলার নিয়ম না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। ফলে এসব সবজি খেয়ে কিডনি ও যকৃতের জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে বলে ধারণা চিকিৎসকদের। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘ মেয়াদী বিকল পর্যন্ত হতে পারে। 

বিজ্ঞাপন

পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, কোন জমিতে কি পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এর সঠিক ধারণা না থাকায় কৃষকরা অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করেই হয়তো পোকামাকড় ধ্বংস করে। এছাড়া বেশি ফলন পাওয়ার আশায় কীটনাশক প্রয়োগ করছে বলে ধারণা। তবে এর জন্য কীটনাশক বিক্রেতাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে সিভিল সার্জন ডা: সৈয়দ আমীরুল হক শামীম জানান, শাক-সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার সময় মুখে কাপড় বাঁধার নিয়ম থাকার পরও কেউ কেউ মানতে নারাজ। অথচ এভাবে দিনের পর দিন স্প্রে করলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষক। কীটনাশক স্প্রে করার দিনই বা পরের দিন জমি থেকে তুলে আনা শাক-সবজি খেলে মানুষের বিভিন্ন কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে চর্মরোগ-ক্যান্সারসহ নানান কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। অতিমাত্রায় কীটনাশক মেশানো সবজি খেলে কিডনির নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রচার করতে হবে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা সবজি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তা না হলে ভবিষ্যত অন্ধকার।

সবজিতে কীটনাশকের পরিবর্তে হলুদ ফাঁদ ও ফেরোমিন ফাঁদের মাধ্যমে সবজির ক্ষতিকর পোকা প্রতিরোধ করে মানবদেহের ক্ষতিকর কীটনাশক পরিহারে কৃষকরা সচেতন হবেন। এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।