যশোরের কেশবপুরে ভূমি জরিপ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উপজেলার আলতাপোল গ্রামের ১১ কৃষক পরিবার বসতভিটা, পুকুর-বাগান সবই হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এলাকার একটি মহল ১৯৬২ ও ১৯৯৬ সালের ভূমি (মাঠ) জরিপের সময় প্রতিপক্ষরা ঘষামাজা পর্চা দেখিয়ে ওই ১১ কৃষক পরিবারের সর্বস্ব রেকর্ড করে দখলে নেওয়ায় তারা বর্তমান উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে পৈত্রিক জমি ফিরে পেতে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে পরিবারগুলো আদালতসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে তৎকালীন ভূমি জরিপ কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কৃষক ইমান আলী গংদের কোনো ওয়ারিশ না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ৬৬৯ শতক সম্পত্তি সমান চার ভাগ করে দিয়ে যায়। ফলে ইমান আলী গংদের ৬৬৯ শতক সম্পত্তির মধ্যে ১৬৭.২৫ শতক জমি রেকর্ড হয় এবং তাদের অবশিষ্ট জমি মৃত সাহেব আলী বিশ্বাস ও মৃত সামাদ আলী গংয়ের নামে রেকর্ড হয়। মৃত সাহেব আলী বিশ্বাসের ছেলে মজিবার রহমান ও মৃত সামাদ আলী বিশ্বাসের ছেলে নজরুল ইসলাম উক্ত সম্পত্তি রেকর্ড করান।
রেকর্ড শর্তে মজিবার রহমান ও মতিয়ার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংরা জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ভূমি জরিপে ১৬৭.২৫ শতক সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ৫১ শতক জমি ইমান আলী গং এর মাতা শহরজান বিবির নামে রেকর্ড হয়। অবশিষ্ট জমিও প্রতিপক্ষরা রেকর্ড করে দখলে নেয়। প্রতিবারই মাঠ জরিপের সময় ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঘষামাজা পরচা দিয়ে কৌশলে ইমান আলী গংদের জমি রেকর্ড করে হাতিয়ে নেয় প্রতিপক্ষ মজিবার রহমান ও মতিয়ার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংরা বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় ১৯৯৬ সালে ইমান আলী গং বাদি হয়ে মৃত সাহেব আলী বিশ্বাস ও মৃত সামাদ আলী বিশ্বাস গং এর নামে বিবাদী করে যশোর বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন। যার নং-৪৮/৯৬। এ মামলার প্রয়োজনে ১৯৬২ সালের এসএ পর্চা পেতে গত ০৭/০৯/১৯৯৬ তারিখে ইমান আলী গং যশোর জেলা রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। ২৬/০৯/৯৬ তারিখে বিজ্ঞ রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৭২ নং আলতাপোল মৌজার এসএ ৭৮৫ খতিয়ানটি ভিন্ন হাতে ভিন্ন কালি দিয়ে লেখা থাকায়, তা সন্দেহজনক, বিধায় নকল সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে আদালতকে প্রতিবেদন দেয়। ফলে পর্চার অভাবে এ মামলায় একতরফা রায় পায় মৃত সাহেব আলী বিশ্বাস ও মৃত সামাদ আলী বিশ্বাস গং।
অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার পর ২০২৩ সালে ইমান আলী গংরা ঢাকা থেকে ৭৮৫ খতিয়ানের সহি মোহরিযুক্ত এসএ পর্চা সংগ্রহ করেন। যে পর্চায় এখনও তাদের ১৬৭.২৫ শতক জমি রয়েছে। পর্চা পেয়ে গত ০১/১১/২০২৩ তারিখে ইমান আলী গংসহ ওয়ারিশ ১১ জন বাদি হয়ে আরএস রেকর্ড সংশোধনের ডিক্রি পেতে প্রতিপক্ষ মজিবার রহমান ও মতিয়ার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংদের ৫৭ জন ওয়ারিশকে বিবাদী করে যশোর বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। যার নং-৩৯০/২৩। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
ইমান আলী গং অভিযোগ করেন, ওই জমির ওপর আমার ও শরিকদের বসতঘর, পুকুর, শিশুগাছ, সুপারী ও বাঁশবাগান রয়েছে। তিনি রেকর্ড শর্তে জমির শরিক মকছেদ আলীর কাছ থেকে ৫৯.৫০ শতক, তার মেয়ে ইশারন নেছার কাছ থেকে ৪০ শতকসহ মোট ৯৯.৫ শতক জমি ক্রয় করেন। যা বিবাদীরা জোর করে দখল করে নিয়েছেন। এছাড়া কোনো দলিল না থাকার পরও আব্দুস সাত্তার গং ১২ শতক ও সুশান্ত সিংহ ১২ শতক জমি জোরপূর্বক রেকর্ড করে দখলে নিয়েছে।
বর্তমান প্রতিপক্ষরা বসতভিটা থেকে আমাদের ১১ পরিবারকে উচ্ছেদ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে অত্যাচার, নির্যাতনসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছে।
এ ব্যাপারে মজিবার রহমান গং বলেন, ২০০৮ সালে ইমান আলীরা আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। ফলে মামলার রায় আমাদের পক্ষে যায়। তারা আমাদের একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এ ব্যাপারে এসএ রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
বর্তমানে উপজেলার আলতাপোল গ্রামের ১১টি কৃষক পরিবার বসতভিটা, পুকুর-বাগান সবই হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।