বিহারি ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি চুয়া সেলিম গ্রেফতার
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার জেনেভা (বিহারি) ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি ও একাধিক হত্যা মামলার আসামি চুয়া সেলিম গ্রুপের প্রধান মো. সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিম ওরফে চোরা সেলিমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক এএসপি খান আসিফ তপু।
তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ত্রাস সৃষ্টিকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি চুয়া সেলিম গ্রুপের প্রধান মো. সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চুয়া সেলিম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার চুয়া সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাসহ বিভিন্ন আইনে ৩৫টি মামলা রয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর জেনেভা ক্যাম্পে প্রতিপক্ষের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে চুয়া সেলিম গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এর চার মাস বাদে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়লেন তিনি।
জেনেভা ক্যাম্পের কোটি টাকার মাদক কারবারের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব বহুদিনের। তবে দেশের অস্থিরতার সময়- গেল জুলাই থেকে লাগাতার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সেখানকার দুটি পক্ষ।
আর সেই সংঘাত প্রাণক্ষয়ী হয়ে উঠেছে লুট হওয়া অস্ত্রে। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেনেভা ক্যাম্পের সংঘাতে ব্যবহৃত হয় থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র। তাতে কয়েক মাসে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বছর কয়েক আগে পুরো ক্যাম্পের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল নাদিম হোসেন ওরফে পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াক নামের দুই যুবকের হাতে। দুজনই মাদক কারবার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন, পালতেন ব্যক্তিগত বাহিনী।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে পূর্বাচলে র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন পাঁচ্চিশ। এরপর ভারতে পালিয়ে যান ইশতিয়াক। মহামারীর সময় কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান বলে ক্যাম্পে জনশ্রুতি আছে।
পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াকের অবর্তমানে ক্যাম্পের শতকোটি টাকার মাদক কারবারের দখল নিতে উঠেপড়ে লাগে দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বুনিয়া সোহেল, আরেকটি পক্ষের নেতা চুয়া সেলিম। আর বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দপুইরা (নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা ‘বিহারি’) নামের আরেকটি পক্ষের নেতা বাবু ওরফে সৈয়দপুইরা বাবু।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংঘাতের কারণে প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছিল জেনেভা ক্যাম্প। এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালী ও হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে বুনিয়া সোহেলসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার দুই মাস বাদে চুয়া সেলিমকেও গ্রেফতার করল পুলিশের এই এলিট ফোর্স।
গ্রেফতার সেলিমকে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।