যে কারণে ঘটেছে ফরিদপুরের রেল দুর্ঘটনা
৪৮ ঘণ্টা আগে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রেল ক্রসিংয়ের উপর ধাক্কা খেয়ে মারা যায় একটি মাইক্রেবাসের পাঁচ যাত্রী। ৪৮ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট। ঘন ঘন হুইসেল দিতে দিতে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় মুন্সিবাজার কাফুরা রেলের অরক্ষিত রেলক্রসিং পাড় হয়।
রেল ক্রসিং এর সামনে আজও ভিড় করেছিল কৌতূহলী অনেক নানা বয়সী মানুষ। তবে ট্রেনটি একাধিকবার হুইসেল দিলেও রেল কর্তৃপক্ষ কিংবা সড়ক বিভাগকে যানবাহনের চালকদের সতর্ক করার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
মুন্সীবাজার সংলগ্ন এই রেলক্রসিংটি বর্তমানে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। গোয়ালন্দ-তাড়াইল সড়কের ফরিদপুর সদরের গজারিয়া হতে মুন্সবিাজার এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক পর্যন্ত এ সড়কটি। সড়ক বিভাগের মালিকানাধীন হলেও ১২ কিলোমিটার পথে অন্তত ছয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বাক রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সময় এ বাঁকগুলির বিষয় বিবেচনা করলে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতো না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রেল ক্রসিংয়ের দুই পাশে ১৬৫ মিটার করে জমি রেল বিভাগের। কিন্তু রেল ক্রসিংয়ের গা ঘেঁষে অন্তত ২০টি দোকান যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তার ফলে ওই পথে চলাচলকারী যানবাহনগুলির চালকদের পক্ষে রেল আসা যাওয়া দেখা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ক্রসিং এর পশ্চিম পাশে মো. হাকিম ব্যাপারি নামে এক ব্যক্তি ইজারা নিয়ে মৎস্য খামারের নামে একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করেছে যা ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া রেল লাইনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রেল ক্রসিং এর দুই পাশে অন্তত ৫০০ মিটার অংশের কলাগাছসহ সব গাছ কেটে ফেলা প্রয়োজন। এই বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সর্দার বলেন, এ সড়কটি দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ক্রসিং সংলগ্ন রেলের জায়গা খালি করা প্রয়োজন।
রেলক্রসিং-এ ট্রেনের সাথে মাইক্রোবাসের সাথে পাঁচজন নিহতের ঘটনার তদন্তে কোন কমিটি গঠন করেনি জেলা প্রশাসন। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই রেলক্রসিং টি যাতে রেল বিভাগের অনুমোদনের আওতায় আসে এবং গেট ও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, মুন্সিবাজার রেল ক্রসিং-এ গেট ও গেট ম্যান নিয়োগ দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হবে। এখানে একটি গেট দেওয়াসহ নিয়মিত গেটম্যানের পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ওই রেল ক্রসিং এর আশেপাশে যে দোকানগুলি রয়েছে সে জায়গার মালিকানা খতিয়ে দেখা হবে। যদি রেলের জায়গায় অবৈধভাবে এ দোকানগুলি নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে রেলের এ জায়গা পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফরিদপুরের মুন্সিবাজারে কাফুরায় মঙ্গলবার রেল ও মাইক্রোর দুর্ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। বুধবার রেলের সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ্ সুফী মোহাম্মদ বলেন, একটি দুর্ঘটনায় পাঁচটি জীবন চলে গেল। এ দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে মুন্সী বাজার কাফুরা রেলক্রসিংয়ে গেট ও গেট ম্যান দেওয়ার আশু কোন পরিকল্পনা নেই। এ গেটগুলি দেওয়ার প্রয়োজন তা আমরা অনুধাবন করি। আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাব পাঠাই, কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলে না।