সিআইইউর সমাবর্তন

সাগর পাড়ে সনদ পাওয়ার দিনে আনন্দ-বিদায়ের স্মৃতি

  • সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাগরপাড়ে সনদ পাওয়ার দিনে আনন্দ-বিদায়ের স্মৃতি, ছবি: বার্তা২৪.কম

সাগরপাড়ে সনদ পাওয়ার দিনে আনন্দ-বিদায়ের স্মৃতি, ছবি: বার্তা২৪.কম

বন্দরনগরী পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম বোট ক্লাব। পাশে বিশাল সমুদ্র। সকাল থেকেই নোনাজল আর ঠাণ্ডা বাতাস যেন প্রশান্তির ছোঁয়া দিচ্ছে। তারই মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শত শত তরুণ-তরুণী, গায়ে কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তনের টুপি। চোখে আনন্দ, গর্ব আর সামনের দিনগুলোর স্বপ্ন। আজ চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন ২০২৫।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে। কারও হাতে ক্যামেরা, কেউ বন্ধুদের জড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে আবেগঘন মুহূর্ত কাটাচ্ছেন। আজকের এই আয়োজন তাদের দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের উদযাপন।

বিজ্ঞাপন

নতুন পোশাক, নতুন উচ্ছ্বাস শুধু কালো গাউনেই সীমাবদ্ধ নয় সাজ। অনেকেই গাউনের নিচে পরেছেন বর্ণিল শাড়ি, সুদৃশ্য স্যুট, পাঞ্জাবি। সাজের এই প্রতিযোগিতা যেন বলছে-আজকের দিনটা সত্যিই বিশেষ।

প্রথমেই যা চোখে পড়ে, তা হলো শিক্ষার্থীদের মুখে সেই গর্বিত হাসি, চোখে স্বপ্ন। অনেকেই নতুন পোশাক পরেছেন, গাউনে ও টুপি সাজে সজ্জিত। নতুন সাজে সাজানো এই তরুণ-তরুণীরা যেন আজকের দিনের একেকটি নায়ক। কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের মা-বাবার সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত, অন্যদিকে অনেকেই হুট করে সেলফি নিয়ে ছবি ভাগ করে নিচ্ছেন। একটু পরেই শুরু হবে তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—সনদ গ্রহণ। আজকের দিনটি তাদের জন্য যেন এক নতুন শুরু, আর এটি তাদের জীবনের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত।

বিজ্ঞাপন

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির রাশেদ বলেন, আজকের দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। নতুন পোশাক, ক্যামেরার সামনে হাসি—সব মিলিয়ে অন্যরকম এক অনুভূতি।

বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত ছবি তুলছিলেন মাহিরা সুলতানা। বললেন, আজকের দিনটা আর আসবে না। তাই স্মৃতিগুলো যত্ন করে ধরে রাখতে চাইছি।

সমুদ্রের বাতাসে বিদায়ের আবেগ

অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের পাশেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। সামনের দিগন্তে নীল জলরাশি। সমুদ্রের বাতাস যেন তাদের প্রশান্তি দিচ্ছে, একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছে—আজ ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিন।

অনেকের চোখে আনন্দ, আবার অনেকের চোখে অশ্রু। স্নাতক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বললেন, এই বন্ধুত্ব, এই ক্লাস, গ্রুপ স্টাডি, ক্যান্টিনের আড্ডা—সবকিছুই মিস করবো।

স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাইয়্যেদ দাউদ বললেন, এই ডিগ্রি শুধু একটি কাগজ নয়, এটি পরিশ্রমের প্রতীক। সমুদ্রপাড়ে আজতের সময়টুকু, পাহাড়ের উপর সিআইইউ ক্যাম্পাস—সবকিছুই মনে থাকবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতো অভিভাবকরাও ছিলেন আবেগপ্রবণ। সন্তানদের এমন অর্জন সরাসরি দেখতে পেয়ে গর্বিত তারা।

আইন বিভাগের রাফিয়া হোসেনের বাবা বললেন, আজ মেয়েকে সমাবর্তনের গাউন পরে দেখতে পেরে গর্বিত। এই অর্জনের পেছনে তার কঠোর পরিশ্রম ছিল।

এদিকে শিক্ষকরাও আবেগাপ্লুত। শিক্ষার্থীদের সফলতা দেখে তারা যেমন আনন্দিত, তেমনি কিছুটা আবেগীও।

সিআইইউর এক শিক্ষক বলেন, এই শিক্ষার্থীরা আমাদের গর্ব। আজ তারা নতুন দিগন্তে পা রাখছে। তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক।


সমুদ্রের গর্জন আর নোনাজলের বাতাসে বিদায় নিচ্ছেন সিআইইউর শিক্ষার্থীরা। তবে এই বিদায় শুধুই আনুষ্ঠানিক, স্মৃতি আর বন্ধুত্বগুলো থেকে যাবে আজীবন....

থিম সং আর সোনার বাংলার সুরে অনুষ্ঠান শুরু

এদিকে বেলা সাগে ১১টায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরু হয় সিআইইউর থিম সং ‘শিক্ষা আমার অধিকার, গর্ব আমার সিআইইউ’ দিয়ে। সব শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে গাইতে শুরু করেন, সুর আর কণ্ঠে মিলেমিশে হয়ে ওঠে একতাবদ্ধ। একেবারে পরবর্তী মুহূর্তে গাওয়া হয় ‘সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, পুরো মাঠে এই সুর ছড়িয়ে পড়ে, যা শিক্ষার্থীদের মনে যেন নতুন প্রেরণা যোগায়। এই গানটি যেন আজকের দিনের অনুপ্রেরণা, শিক্ষার গৌরবকে তুলে ধরে।

অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোর পাঠ, সবাই একযোগে শুনতে মনোযোগী হন।

২১৮৯ শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণ:

এবারের সমাবর্তনে ২১৮৯ জন শিক্ষার্থী সনদ পাচ্ছেন। এর মধ্যে ১৪৫২ জন স্নাতক, ৭৩৭ জন স্নাতকোত্তর। ১৪ জন পাবেন ‘টপ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড’, আর ২ জনকে ‘ভ্যালেডিক্টোরিয়ান’ সম্মাননা দেওয়া হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসার বলেন, এই সমাবর্তন শুধু শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের স্বীকৃতি। তারা আজকের এই অর্জন দিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবেন।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাউজুল কবির খান। তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেবেন।

বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে শিল্পগ্রুপ ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং।