চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামী বর্ষার আগে করণীয় হিসেবে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদারকি দল। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আগামী মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স

বিজ্ঞাপন

ভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীরপ্রতীক। এসময় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং মতামত তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চার মাস সময় দেওয়া হলো। এরপরও যদি কোনো ফল না আসে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দৃশ্যমান সুফল আশা করি। বর্ষায় আমরা এসে আবার প্রকল্প মনিটরিং করব। যারা ব্যর্থ হবেন, তাদের দায় নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার না হওয়া এবং বর্জ্যে ভরে যাওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ। সিটি কর্পোরেশনের অনেক জনবল নিয়োগ করা আছে, কিন্তু তাদের কাজের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমাদের সামাজিক আন্দোলনের মতো কাজ করতে হবে। এজন্য ১৫ দিনের জন্য ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে ড্রেন ও খাল পরিষ্কারে কাজ করানো হবে।

পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ না করলে জলাবদ্ধতা নিরসন অসম্ভব। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খালের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ভবনগুলো সরাতে ভূমি প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। খাল-ড্রেন পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড় কাটার সঙ্গে জলাবদ্ধতার সম্পর্ক থাকলেও সেটি গৌণ। বরং খাল পরিষ্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। একটার পর একটা ব্যবস্থা নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীরপ্রতীক বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব ছিল। এবার সবার সমন্বিত উদ্যোগে কাজ হবে। খাল পুনরুদ্ধার ও নির্মাণাধীন খালগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৬ বছর ধরে কোনো সমন্বয় ছিল না, এটাই মূল পয়েন্ট। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এক হয়ে প্ল্যান নিতো তাহলে এসব কথাগুলো আসতো না। এক সংস্থার প্রজেক্ট আরেক সংস্থার কাছে চলে গিয়েছিল। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম সেসময় এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। তখন সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। আমরা এখন খুব আশাবাদী। কারণ আমাদের মধ্যে সমন্বয় আছে।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, অতীতে যে বাজেটগুলো হয়েছে এবং সেখান থেকে ব্যয় করা হয়েছে এর পর্যালোচনা করা দরকার। ৩০০ কোটি টাকার বাজেট কীভাবে ১ হাজার ৩০০ কোটি হয়ে যায় সেটা আমাদের জানা দরকার। এটার পেছনে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। খালের পাশে যেসব দখলদার আছেন তাদের বাড়ি ভেঙে ফেলেন। না পারলে আমাদের সহযোগিতা নেন।

১১ দফা কর্মপরিকল্পনা:

১. চট্টগ্রাম শহরের সকল ধরণের পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

২. চট্টগ্রাম শহরের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া, যেসকল সুয়ারেজের লাইন সরারসি ড্রেনে উন্মুক্ত হয়েছে, সেসকল সুয়ারেজের লাইন স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ১৭ টি স্লুইচগেটের মধ্যে ১৫টি আগামী মে মাসের মধ্যে চালু করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন ২১ টি স্লুইচগেটের মধ্যে ১২টি একই সময়ের মধ্যে চালু করতে হবে।

৪. চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করাযর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৫. চসিককে বারইপাড়া খাল খননের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। মে মাসের মধ্যে এ খালের সকল বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে।

৬. চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় করবে। এ কমিটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সাংবাদিক/সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৭. চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর আওতায় চলমান খাল খনন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খালগুলো দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে।

৮. কর্ণফুলী নদীর প্রয়োজনীয় নাব্যতা ও গভীরতা বজায় রাখার জন্য মেইনট্যানেন্স ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৯ . জলাবদ্ধতার হট স্পটগুলোতে পাম্পহাউজ চালু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

১০. রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আগামী মে মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

১১. প্রকল্পগুলোর বাইরে থাকা ২১ টি খাল ও ড্রেনের বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।