জুলাই হামলায় জড়িতদের শাস্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পরেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর সরাসরি হামলাকারিরা এখনো বহাল তবিয়তে আছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে। প্রায় দেড় মাস আগের সিদ্ধান্ত রহস্যজনক কারনে এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হামলার নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, গত জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়াদ শরীফ সিরাজের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক মারধর করা হয়। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে পতিত স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রামেক কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া সিরাজের সহযোগি অপর পাঁচজনকে ছাত্রলীগ নেতা আয়াদ শরীফ সিরাজসহ মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বর ২০২৪ এর প্রথম সপ্তাহে ছাত্রলীগ নেতা ও ২০১৯-২০২০ সেশনের ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী(রোল-১৬) আয়াদ শরীফ সিরাজকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে তার সহযোগী হিসেবে আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সেই ৫জন হলো: ২০২০-২১ সেশনের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বিক্রম আদিত্য চাকমা-রোল-৪১, ২০২১-২২ সেশনের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন-রোল-৩২, ২০২২-২৩ সেশনের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিং সিং এ মং মারমা-রোল-৪২, ২০২২-২৩ সেশনের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুমার বৈদ্য-রোল-৩৪, ২০২২-২৩ সেশনের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৃজন কান্তি দে-রোল-১৩।

অভিযুক্তদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত আয়াদ শরীফ সিরাজকে একাডেমিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই বছরের জন্য রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারসহ কলেজের ছাত্রাবাস থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে মেডিকেল কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান, ষষ্ঠ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীকে বহিরাগতদের দিয়ে আক্রমনের চেষ্টা ও রামেকের ২নং বয়েজ হোস্টেলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা কারনে আক্রমণাত্মক হামলা এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপের মতো ঘটনায় অংশগ্রহণের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

এছাড়া সিরাজের সহযোগী অপর পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি কর্তৃক ২৪ সালের ১৬ই জুলাইয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের মধ্যে সংগঠিত সংঘাতময় অপ্রীতিকর ঘটনায় শিক্ষার্থী আয়াদ শরীফকে সহযোগিতা করা ও ১৫ এবং ১৬ জুলাই তারিখে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণে বাধা প্রদানের সত্যতা পাওয়ায় তাদেরকে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস থেকে তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল।

বিজ্ঞাপন

একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ প্রীতি প্রসূন বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে গত ০৯/১২/২০২৪ ইং তারিখ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কথা বলা হলেও প্রায় দেড় মাস সময়েও উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জুলাই আন্দোলনে নির্যাতন ও হুমকি হামলার শিকার সাবেক জিএসসহ একাধিক শিক্ষার্থী, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অত্যাচারি পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রক্ষার অভিযোগ তুলে এই বিষয়ে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, আমরা মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা আমাদেরকে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই হামলা সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে একাডেমি কাউন্সিল কর্তৃক তদন্ত কমিটি সত্যতার পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত সিদ্ধান্ত রহস্যজনক কারনে নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়নি। এছাড়াও উক্ত নোটিশটি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়। সম্প্রতি সেই অভিযুক্তরা হোস্টেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানান হুমকি-ধামকি দেওয়াসহ পতিত সরকারের পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম চালালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামীপন্থী চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ এর সক্রিয় নেতা হওয়ার কারনে ছাত্রলীগের সকলকে রক্ষা করছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেল এর সমন্বয়ক ডাঃ হাবিবুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এই বিষয়ে আমার আগে জানা ছিলোনা। আপনি একজন দায়িত্বশীল হয়ে একাডেমিক সিদ্ধান্ত কেন বাস্তবায়ন করলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি বিষয়টি এখন দেখবো।

অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দেড় মাসেও কেন কার্যকর করা হলো না এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর নাদিয়ে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, এখনতো পরীক্ষা চলতেছে তাই হয়তো তারা যায়নি। পরীক্ষা শেষ হলে আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।