মামলা বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য যারা করে তারা দেশের শত্রু: শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, , গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন জায়গা মামলা বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য ঘটনার কথা শোনা যায়। যারা এই কাজগুলো করে তাঁরা এ দেশের মানুষের শত্রু। তাঁরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বিরোধী। আমাদের জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয় এমন কাজ আমরা করবো না। ন্যায়ের পাশে, ইনসাফের পাশে আমরা যতোদিন আছি ততোদিন আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল তাঁরা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে একদিনেই তাঁদের ৫ লক্ষ নেতাকর্মীকে খুন করা হবে। জামায়াত নাকি এই খুন করবে। কিন্তু গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত জামায়াত ইসলামের নেতৃত্বে কোথাও কোন খুনের ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ খুনি নয়। বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমিক।’
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন।
শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ এ দেশের মালিক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। এ দেশে কেউ মেজরিটি আর কেউ মাইনরিটি নয়। সবাই সমান। সকল ধর্মের মানুষ সমান। বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাস দেখেন কারা সংখ্যালঘুদের জমি দখল করেছে। কারা তাদের ভিটেমাটিতে আগুন দিয়ে তাঁদের উচ্ছেদ করেছে। এই ইতিহাস সবাইকে জানাতে হবে। আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামের সমর্থন প্রত্যাশা করে জামায়াতের আমির বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের জন্য দুর্ভিক্ষ ছাড়া আর কি উপহার দিতে পেরেছে। একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া বাসন্তিকে জাল পড়িয়ে এদেশের ইজ্জত বহির্বিশ্বে নষ্ট করেছে। বিগত ১৬ বছরে তাঁরা এ দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। অথচ যা কিছুই ঘটে, যা চুরি হয় কেষ্ট ব্যাটায় চোর বলে হাজির করা হয়েছে। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে চোর হিসেবে আওয়ামী লীগ হাজির করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই কর্মী সম্মেলন থেকে দেশবাসীকে বলতে চাই, যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের হাতে এ দেশের মানুষ নিরাপদ। এ দেশের সম্পদ নিরাপদ। ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে এবং আমরা যেন তাদের আশ্রয়-প্রশয় না দেই।
পিলখানার হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বিড়াইবাড়ী সীমান্তে বিডিআর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধে ভারতীয় বাহিনীর পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসাবে পিলখানার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফ্যালানি হত্যার বিচার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে করতে পারেনি। এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটির বিচার হবে। খুনিদের কোন মাফ নাই। আমরা বাংলাদেশে যত অন্যায় ভাবে যত মানুষকে খুন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে সকাল ৯টায় কর্মী সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল বিকেল থেকে এবং আজ শুক্রবার সকালে ফজরের নামাজের পর থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। সকাল ১১ টার মধ্যে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। পরে সরকারি কলেজ মাঠে স্থান না পেয়ে নেতাকর্মীদের অনেকে কুড়িগ্রাম মার্কাস মসজিদ, জজ কোর্ট এলাকা ও কলেজ মোড়ের বিভিন্ন মাঠে থেকে জামায়াতে ইসলামের আমীরের বক্তব্য শোনেন। এসময় কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলার জামায়াতে ইসলামের আমির উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম প্রমুখ।