বরিশালের কাশিপুর এখন যেন এক মর্মান্তিক আতঙ্কের নাম। গত পাঁচ সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক নির্মম ঘটনাগুলোতে পুরো নগরবাসীর মধ্যে এক অভাবনীয় আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
গত তিন দিনে বরিশাল নগরীর ইছাকাঠী এলাকায় পুকুর, ডাস্টবিন ও ঝোপঝাড় থেকে মানুষের শরীরের সাতটি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। উদ্ধারকৃত শরীরের টুকরোগুলো কোন নারীর শরূীরের এবং ওই নারীকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ নিখুঁতভাবে কাটা হয়েছে বলে ধারণা করছেন পুলিশ।
প্রথম টুকরোটি উদ্ধার হয় গত ২৬ জানুয়ারি। ইউনুস সিকদার নামে একজন বাসিন্দা দীঘির পাশে একটি মাছ ভাসতে দেখেন। কাছে গিয়ে দেখতে পান, সেটি আসলে মানুষের পায়ের অংশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দেহের আরও চারটি টুকরো উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানান, টুকরোগুলো দেখে মনে হয়েছে, সেগুলো বাসার ফ্রিজে সংরক্ষণ করা ছিল। পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় এসব অংশগুলো পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, তবে এখনো কোনো সমাধান করতে পারেনি।
বরিশাল নগরীতে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া অপরাধ এবং পুলিশের ভূমিকাহীনতায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি করেছে। কাশিপুরে টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার থেকে শুরু করে শহরের অন্যান্য এলাকায় প্রকাশ্যে হামলা এবং চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, অপরাধীরা দিনের পর দিন আরও সাহসী হয়ে উঠছে।
ইছাকাঠীর বাসিন্দারা এখন রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন না। দেহের টুকরো উদ্ধারের ঘটনায় এলাকার একজন স্থানীয় নেতা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, যেকোনো সময়ে ডাক-চিৎকার শুনলেই মনে হয় আবার লাশের টুকরো পাওয়া যাবে। স্থানীয়দের ধারণা, খুনি আশেপাশেই থেকে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং এলাকার প্রতিক্রিয়া দেখেই আনন্দ পাচ্ছে। তল্লাশির সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখে স্থানীয়রা যতই স্বস্তি পায় না কেন, তারা বারবার প্রশ্ন তুলছে, কেন হত্যাকারী ধরা পড়ছে না।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রুনা লায়লা জানিয়েছেন, ৩ দিনে উদ্ধার করা সাতটি টুকরো এক নারীর দেহের অংশ এবং হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ মেলে যে খুনি পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। বিভিন্ন বাড়ি, ঝোপঝাড়, রিজার্ভ ট্যাংকসহ সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীকে গ্রেফতার করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নগরবাসী অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি করছে। তারা চায়, বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সুষ্ঠু তদন্ত, কার্যকর পুলিশিং এর মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত দমন করার দাবি জানান নগরবাসী।