নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের ডাক বিএনপির
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সেই দাবি আরও জোরালো হয় দলটির গত ৮ নভেম্বরের সমাবেশ থেকে। ওই সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আরও গতিশীল করে তোলে দলটিকে। এর প্রেক্ষিতেই আগামী নির্বাচনে নিজেদের প্রস্তুতি শক্ত করতে ও যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখতে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আরও একটি বড় জনসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
তবে সমাবেশের নির্দিষ্ট সময় এখনো স্পষ্ট করা না হলেও আগামী মাস থেকে কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
এর আগে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এ বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জামায়াত ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিএনপির পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে দলটি।
সমাবেশের বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতা আরও দীর্ঘায়িত না করতে ও বিএনপিকে খাটো করে না দেখতে পারে সেজন্যই এই সমাবেশ করা হবে। এছাড়াও দেশে আর যেন কোনো ষড়যন্ত্র না হয় ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় থাকে সেটাই হবে এই সমাবেশের লক্ষ্য। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও বড় শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
তারা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়াও একসঙ্গে চলা উচিত। এতে দেশের মানুষের মনে আস্থা ফিরে আসবে। রোডম্যাপ না দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা রয়েছে সেটি আরও বাড়বে। এতে দলগুলোও অনিশ্চয়তায় পড়বে।
নির্বাচনে বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। আমরাও এ বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু যতই নির্বাচন পেছাবে ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে। তাই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই- বলেছেন বিএনপির নেতারা।
উপদেষ্টা পরিষদে নতুন করে তিনজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এ বিষয়ে তারা বলেন, যাদেরকে এখানে নিয়োগ করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুজনই বিতর্কিত। এমন সিদ্ধান্তে বিএনপি বিস্মিত হয়েছে। এ নিয়ে তাদের আরও যাচাই-বাছাই ও চিন্তা করা উচিত ছিলো। এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছিল বিএনপি।
বিএনপি'র সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব সৃষ্টির বিষয়েও আলোচনা হয় এ বৈঠকে। দলটির নেতারা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে অতীতেও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলন করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। আমরা তাদেরকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই।
তবে মনোমালিন্য কিংবা দূরত্ব যাতে তৈরি না হয় এজন্য জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন নেতারা।