অনেক সময় আমরা হারিয়েছি, আর সময় হারানো যাবে না। এখন জরুরি ভিত্তিতে ঐক্য সৃষ্টি করে, সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ নুর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনৈক্যের জন্যই কিন্তু আমাদের আজকের এই অবস্থা, আমরা এগোতে পারিনি। আজকে আমাদের প্রয়োজন হলো, যে দলগুলো আছে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো। দেরি না করে আমাদের এটা করা দরকার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যে সবাই আলাদাভাবে বক্তব্য রাখি, লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, এভাবে হলে দেশের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে। অনৈক্যের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে। একদিকে না গিয়ে আমরা বিভিন্ন দিকে ছুটবো। এই জিনিসটাকে আমরা উপলব্ধি যত দ্রুত করি ততই ভালো।
দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, এখন আমাদের সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একটা কর্মসূচি সামনে আনতে হবে৷ সব মানুষকে এক সঙ্গে নিয়ে যদি আমরা সামনে আগাই, তখনই সম্ভব হবে আমাদের লক্ষণগুলো অর্জন করা। অনেক সময় আমরা হারিয়েছি, আর সময় হারানো যাবে না। এখন জরুরি ভিত্তিতে ঐক্য সৃষ্টি করে, সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ডা. মিলন, নূর হোসেনদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় '২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আরেক স্বৈরশাসকের বিদায় নিতে হয়েছে। জুলাই-আগস্ট '২৪ এর ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে প্রায় দেড়-সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ডা. মিলন-নূর হোসেনসহ '২৪ এর জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা যে কারণে জীবন দিয়েছেন, তাদের স্বপ্নের-আকাঙ্খার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেই আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।
আমাদের এখন অঙ্গীকার করতে হবে যে, এবার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়। যোগ করেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ১৯৯০ -এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক ঘটনা শহীদ ডা. মিলন হত্যাকাণ্ড। ২৭ নভেম্বর '৯০ এর সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অগ্নোৎপাতের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ৬ ডিসেম্বর '৯০ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর দেশের আপামর জনগণ প্রত্যাশা করেছিল যে, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এবং রুগ্ণ রাজনীতির কারণে মানুষের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় অচিরেই। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৩ জোটের যে ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী সরকারগুলি ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই জনগণ গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রের শাসন লক্ষ্য করেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বারবার এ দেশের জনগণ সুশাসনের পরিবর্তে দুঃশাসনের কবলে নিষ্পেষিত হয়েছে।