যারা দ্রুত নির্বাচন চায় তারা সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার ওপর হামলা করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ এই কথা বলেছেন তিনি। 

এসময় তিনি বলেন, “ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে তাল মিলিয়ে যারা দ্রুত নির্বাচন চায়, তারা এই হামলার পেছনে রয়েছে। আপনারা লাশের রাজনীতি বন্ধ করুন। বাংলাদেশে আর কোনো লাশের রাজনীতি চলবে না।“

আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, "১৯৭২-এর সংবিধানে দেশের প্রতিটি জাতিকে স্বীকৃতি না দিয়ে সকলকে বাঙালি বলে একসূত্রে গাঁধতে চাওয়া হয়েছিল। এতে বাকি জাতি সত্তার অধিকার হরণ করা হয়েছে। আজকের হামলার ঘটনাও বাঙালি বলে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অথচ গত ৫ অগাস্ট এই স্লোগানকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র-জনতা।"

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে 'স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি'র হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে আজ আন্দোলনরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের আড়ালে একদল সন্ত্রাসী ভয়াবহ হামলা চালায়। এই সন্ত্রাসী হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম সংগঠনটি এ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্বাধীন বাংলাদেশে যেকোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে, বিগত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ ও সভা-সমাবেশের যে অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন করে এধরণের পরিকল্পিত হামলা ভয়ঙ্কর উদ্বেগজনক। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে এধরণের ন্যাক্কারজনক হামলা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি অবমাননা ও তাদের স্বপ্নের মুক্ত বাংলাদেশের ওপর আঘাতের শামিল। এধরনের হামলাকারীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

এই ঘৃণ্য হামলার ঘটনায় যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

আদিবাসী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য পেশার মানুষের প্রতি বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গাসহ অন্যান্য আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে এই কথা বলেছেন তিনি।

এসময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, দেশের ভূখণ্ড বিভাজনের জন্য দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই বিভাজনের বিপক্ষে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাহাড়ের ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান থাকবে বিদেশি পৃষ্ঠপোষ্যের ফাঁদে আপনারা পা দিবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মতপার্থক্য সমাধান করার জন্য গোলটেবিলের আলোচনা উন্মুক্ত রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমাধানের পথ খুঁজব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাত্র ৫ মাসের মাথায় আমরা দেখছি শেখ হাসিনার আমলে যে ধরণের ট্যাগিংয়ের রাজনীতি হতো, নিজেরা হামলা করে নিজেরা আহতের ভান ধরতো একইভাবে আজও নাটক রচনা হলো।

বাংলাদেশে জাতিগত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে হামলার মতো ঘৃণ্য কোনো কর্মকাণ্ড যেন বাস্তবায়ন করতে না পারে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আজকের এই হামলা অন্তর্বর্তী সরকারসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন প্রশাসনের সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করে। দুই সংগঠনের একই জায়গায় প্রোগ্রাম হচ্ছে এটা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে আগে থেকেই জানা উচিত ছিল এবং সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো।

বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ব্রিটেনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগে লেবার পার্টির এমপি, ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করার ফেসবুকে শুকরিয়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। 

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে টিউলিপ তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর আসিফ নজরুল তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি বার্তা দেন। 

নিজের ভেবিফাইড ফেসবুকে টিউলিপের ছবি সহ একটি পোস্ট করেছেন তিনি। সেই ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন ‘ইনশাআল্লাহ, এই খুনি আর লুটেরা পরিবারে আরও অনেক কিছু  হবে!’। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে রাজনীতি করছিলেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে উপহার পাওয়া একটি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করায় নানামুখী চাপে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগে ব্রিটেনে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে।