আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন : জামায়াতে আমির

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন/ছবি: সংগৃহীত

আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন/ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। খারাপ ফুলের গাছ কাটা পড়েছে, কিন্তু আগাছ রয়ে গেছে। এগুলোকে আমরা পরিষ্কার করব ইনশাল্লাহ। বৈষম্যহীন সমাজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জীবন যায় যাবে, তবুও আমরা আন্দোলন ছাড়ব না।’

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার প্রথম শহীদ শাহরিয়ার শুভর পিতা আবু সাঈদ।

বিজ্ঞাপন

জামায়াতের আমির বলেন, ‘একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না, আল্লাহর কসম আমরা থামব না। আমরা কোনো রক্তচক্ষুর পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি শুধু পরোয়ারদিগার মহান আল্লাহ সুবহানুহু তায়ালার। সেই পরোয়ানা করি না বলেই আমাদের এতগুলো নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করি নাই, করছি না, করব না। হাজার বছর শিয়ালের মতো বাঁচাই চাইতে একটা শ্বাস সিংহের মতো নিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বলতে চাই, ন্যায্য কথা বলতে কেউ যেন কারো পরোয়া না করে। সাংবাদিকরা সাড়ে ১৫ বছর ন্যায্য কথা বলতে পারে না। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বিভিন্ন মিথ্যা খবর সরবরাহ করতে। সমাজে ভীতি সঞ্চার করে তাদেরকে খবর সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা চাই, মিডিয়া এখন থেকে কালোকে কালো বলবে, সাদাকে সাদা বলবে। চোখে চোখে রেখে খবর পরিবেশন করবে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে করে জামায়াতের আমির ডা. শফিক বলেন, ‘আপনার দেশকে ভালোবাসুন। দখলবাজি, চাঁদাবাজি, পদ-পদবি নিয়ে মারামারি এগুলো বাদ দিন। এগুলো মানুষ এখন ঘৃণা করে। সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এগুলো ছেড়ে দিতে হবে। সত্যিই যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে বিবেকবান লোকজন যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। এবং তখন দেশে একটা সুশাসন আশা করা যায়। কিন্তু এই বদ খাসিলত যদি কেউ ছাড়তে না পারে, তাহলে অনুরোধ করব, জনগণকে বোকা ভাববেন না। এই জনগণ যথেষ্ট হুশিয়ার। আর রক্ত দিতে দিতে হুশিয়ার হয়েছে। অতএব জনগণকে বোকাও ভাববেন না, দুর্বলও মনে করবেন না। যদি মনে করেন, কালো টাকবার পেশিশক্তি দিয়ে কিছু করবেন, সেই দিন শেষ। ওই দুশ্চিন্তা আর করার দরকার নেই। জনগণ এই সুযোগ কাউকে দিবে না ইনশাল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বাংলাদেশে আমাদের সন্তানের জন্মের পরে সরকারের দায়িত্ব হবে তার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ৫ বছর বয়স হলে তার শিক্ষা তার হাত তুলে দেয়া। শিক্ষাজীবনে তার পাশে থাকা। যার মা-বাবা আছে, তার দায়িত্ব সে নিজে পালন করবে। যার কেউ নেই, সরকারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। আর একটা ছেলে অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় শেষ হয়ে যাক, এটা আমরা দেখতে চাই না। এই শিক্ষা হবে নৈতিক শিক্ষা, আল্লাহকে ভয় করার শিক্ষা, মানুষকে সম্মান করার শিক্ষা, দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা। এই শিক্ষা হবে দেশ গড়ার কারিগরের শিক্ষা। এই শিক্ষাজীবন শেষ করার সাথে সাথে তাদের হাতে দেশ গড়ার কাজ, দেশ গড়ার চাবি উঠে আসবে ইনশাল্লাহ। নারী-পুরুষ সবাই মিলে আমরা এই দেশকে গড়ব। যার যেখানে যে যোগত্য আছে, সকলেই সম্মান এবং নিরাপত্তার সাথে তার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। একজন মানুষ ঘরে নিরাপদ থাকবেন, রাস্তায় চলাচলেও নিরাপদ থাকবেন, কর্মক্ষেত্রেও তিনি নিরাপদে থাকবেন। তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে বিধান করতে হবে।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভদ্র লোকের দল। “তোমরা ভালো জায়গায় থাকো, আর খতমে ইউনুস পড়ো। এই সমাজ আমরা চালাচ্ছি, যেভাবে পছন্দ আমরা চালাবো। আমাদের লুট চলবে, দখলবাজি চলবে, চাঁদাবাজি চলবে, ঘুষ চলবে, এগুলো নিয়ে তোমরা কথা বলতে যেও না।” তোমরা কথা বললে আমরা থামব না। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি, সাড়ে ১৫ বছর তো এরকমই একটা সরকার ছিল, শেষ পর্যন্ত দুপুরের রান্না করা ভাতটাও খেয়ে যেতে পারেনি। সুতরাং খোদার ওপর পোদ্দারি করবেন না। আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ যাকে ধরে তাকে ছাড়েন না। ক্ষমতা কোনো মামু বাড়ির বিষয় নয়, এটি একটি দুর্বহ বোঝ। জাতির পক্ষ থেকে বিশাল আমানত। এই আমানত আল্লাহ কাউকে কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে কাউকে সাহায্য করেন। কাউকে এর মাধ্যমে আল্লাহ অভিশপ্ত করেন, কাউকে অভিনন্দিত করেন।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, এ কথা আর শুনতে হবে না। বিচার কারো মুখের দিকে তাকিয়ে হবে না। কারো পদ-পদবি, দলীয় অবস্থান বিবেচনায় নেয়া হবে না। বরং তিনি যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’ তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এতো মানুষের জীবন, এতো আলেম-ওলামার জীবন, এতো হাফেজে কুরআনের জীবন, এতো এতিমদের জীবন, এত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জীবন, এতো সাধারণ মানুষের জীবন, আসুন আমরা তার মূল্য দিই। আমরা একটা স্বপ্নের, সাম্যের, মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ জেলার আমির আলী আজম, কুষ্টিয়া জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির তাজউদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক প্রমুখ। কর্মী সম্মেলন পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।