ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর তীর অবৈধভাবে ভরাট করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ জেটি নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) দুটি কেন্দ্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে গত ১ ডিসেম্বর এপিএসসিএলের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মজিদ রাস্তা ও জেটি নির্মাণ করে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে দুটি ইউনিটের উৎপাদন স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উল্লেখ করে জেটি স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। একই দিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এক চিঠির মাধ্যমে তিন দিনের মধ্যে এপিএসসিএলের উত্তর-পশ্চিম পাশের মেঘনার তীরে নৌযান ভেড়ানোসহ মালপত্র ওঠানামা বন্ধ করতে বিএনপি নেতা শাহজাহানকে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ-ভৈরব নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড চ্যানেল-১ শুল্ক আদায়’ কেন্দ্র ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ইজারা পান আশুগঞ্জ উপজেলার বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান। গত ৩০ জুন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন বিএনপি নেতা শাহজাহান।
চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, সকল আদেশ, নির্দেশ ও শর্তাদি মেনে চলাসহ ইজারা প্রদত্ত ঘাটের সীমানায় তীর ভূমির কোনোরূপ পরিবর্তন কিংবা নতুন কোনো পয়েন্ট তৈরি এবং ঘাট সীমানার মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো অবকাঠামো তৈরির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেপিআইভূক্ত প্রতিষ্ঠান এপিএসসিএলের উত্তর-পশ্চিমে মেঘনার তীরভূমিতে বালু ভরাটের মাধ্যমে জাহাজযোগে আনা মালামাল ক্রেন দ্বারা নামিয়ে ট্রাকে তুলে এপিএসসিএলের পানি নির্গমনের নালার ওপর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীনসহ কর্মপরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
এপিএসসিএলের আশপাশ এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত। এখানে অবাধে ও অনিয়ন্ত্রিত ভারী যানবাহনের চলাচল গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ইজারা চুক্তির শর্তাদির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জায়গাটি মালামাল উঠানো-নামানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদিত স্থান নয়।
এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, এপিএসসিএল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি স্থানীয় কিছু সংখ্যক জনগণ মেঘনা নদীর বেশ কিছু অংশ ভরাট করে জেটি নির্মাণ করেছেন। জেটি থেকে সড়ক পর্যন্ত বালুর রাস্তা রয়েছে। বালু সড়কের নিচে এপিএসসিএলের ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের কুলিং ওয়াটার পাইপ, র ওয়াটার পাইপ, ফায়ার এবং সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, ড্রিংকিং ওয়াটার পাইপ এবং ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের (সিসিপিপি) ওয়াটার আউটফল পাইপ গিয়েছে। বালুর রাস্তার ওপর দিয়ে ধান-চালের ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে রাস্তার নিচে থাকা সকল পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্তু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাইপ লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্ল্যান্ট দুটি দীর্ঘ মেয়াদি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটটি আমার নামে ইজারা দিয়েছে। জনগণের স্বার্থে জায়গাটি আমরা সংস্কার করেছি। নীতিমালার বহির্ভূত কিছু করিনি।
বিআইডব্লিউটিএ এর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দরের উপ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, জায়গাটি ইজারা দেওয়া হয়নি। কেপিআই প্রতিষ্ঠানের পাশে এই ধরণের স্থাপনা হতে পারে না। ঘাট ও জেটি অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।