সংগ্রামে- নির্ভয়ে আটাশ পেরিয়ে উনত্রিশে চবিসাস

  • মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেস্পন্ডেন্ট বার্তা২৪. কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংগ্রামে- নির্ভয়ে আটাশ পেরিয়ে উনত্রিশে চবিসাস

সংগ্রামে- নির্ভয়ে আটাশ পেরিয়ে উনত্রিশে চবিসাস

সত্যে-সংগ্রামে দূরন্ত ছুটে চলা কতিপয় নির্ভীক তরুণের সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ২৮ পেরিয়ে ২৯ বছরে পদার্পণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

চব্বিশের গণঅভুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে 'নির্ভীকতায় পেরিয়ে আটাশ উনত্রিশে চবিসাস '।

চবিসাসের শুরুটা খুব মসৃণ ছিল না। নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে আজ থেকে ২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ১০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে চবিসাস। সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে দায়িত্ব সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের পাহাড়সম এক প্রত্যাশা।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ এ যাত্রা যেমন গৌরবের, তেমনি ছিলো চ্যালেঞ্জিং। বিভিন্ন সময় হুমকি-ষড়যন্ত্র ও চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখছে চবিসাস। এজন্য রক্তও ঝরেছে কয়েকজন সাংবাদিকের।

এ দীর্ঘ সময়ে চবিসাসের সাংবাদিকদের কলমে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, দুর্নীতি ও অনিয়ম। এমনকি সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় ২০১৪ সালে মামলাও হয়েছিল সমিতির তৎকালীন অর্থ সম্পাদক ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। বার বার সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছেন। তবে এসব মামলা-হামলায় কখনোই দমে যায়নি চবিসাস। বরং আন্দোলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সময়োপযোগী ভূমিকা রেখেছে প্রতিটি ঘটনায়।

সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভুত্থানে পুরো চট্টগ্রামে চবি শিক্ষার্থীরা ছিল নেতৃত্বের আসনে। ফলে চবিসাস শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে। আন্দোলন ক্যাম্পাস থেকে শহরে গড়ালে আমরা প্রতিদিন রুটিন করে আন্দোলন কাভার দিতে যেতাম। পরবর্তী সংস্কার আন্দোলন সংঘর্ষে রুপ নিলে চবিসাসের সদস্যরা পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করলে সমগ্র দেশে চট্টগ্রামের অবস্থা জানার সুযোগ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংবাদিকতায় অপরাধ, রাজনীতি, পরিবেশ, বাণিজ্য, গবেষণা, আইন, বাজেট, খেলাধুলা, উদ্ভাবনসহ জাতীয় প্রেক্ষাপটের প্রায় সব বিষয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ হয় হাতে-কলমে। হুমকি, চাপ কিংবা আনন্দ-সব অভিজ্ঞতাই হয় এখানে।

২৮ বছর ধরে ব্যালট-ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করে আসছে চবিসাস। প্রতিবছর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সংবিধান অনুযায়ী এক বছর আগে সমিতির সদস্য পদ লাভ করেছেন এমন সকল সদস্যই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

১৯৯৭-৯৮ সেশনে সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন আহমেদ করিম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল মালেক। বর্তমানে সমিতির ২৫তম কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কঠিন সময়ে চবিসাসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ আজহার এবং সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান। এ সংগঠনের রয়েছে সাত সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ। সমিতির বর্তমান সদস্য ৪১ জন। দেশসেরা প্রায় সকল পত্রিকা এবং নিউজ এজেন্সি ও টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করছে চবিসাসের সদস্যরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে পদাধিকারবলে দায়িত্বে থাকেন চবি উপাচার্য। বর্তমানে চবিসাসের প্রধান উপদেষ্টা চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এছাড়াও পদাধিকারবলে চবিসাসের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন- চবি উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি, তথ্য শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে মনোনীত দুই জন সদস্য।

বর্তমানে দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালসহ দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে রয়েছে এ সমিতির সদস্যরা। কেউ কাজ করছেন ব্যুরো প্রধান হিসেবে, কেউ আছেন নিউজ এডিটর আবার কেউ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কিংবা নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিজের অনুভূতি জানিয়ে চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জান বলেন, আজকের এ দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের অগ্রজ কলম সৈনিকদের। যাদের সাহসী পদক্ষেপে চবিসাস এ জায়গায় পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মহান স্বাধীনতার চেতনা ও প্রগতিশীল ভাবধারা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদচর্চা, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করে আসছে চবিসাস। সমিতির ভবিষ্যৎ আরও মসৃণ এবং সুন্দর হোক এটাই প্রত্যাশা।

চবিসাসের সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, সকলের প্রতি রইলো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। ২৮ পেরিয়ে আজ ২৯ বছরে পা দিয়েছে চবিসাস। এ উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। সমিতির সাবেক বর্তমান সকল সদস্যের অংশগ্রহণে আজকের এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আশাকরি।