৪ বছরে গুচ্ছের প্রধান লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়নি: জবি শিক্ষক সমিতি
জিএসটি গঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিলো শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত দুর্ভোগ কমানো, শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক খরচ কমানো ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি মনে করে- বিগত চার বছরে এই তিনটি লক্ষ্যের কোনোটাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। বরং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররাফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বলেন।
জবি শিক্ষক সমিতি আরও বলেন, ২০২১ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গুচ্ছে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন করে আসছে। গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভূক্ত করার পিছনে ষড়যন্ত্র ছিলো বলে পূর্বের শিক্ষক সমিতি মনে করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো কিছু স্বার্থান্বেষী চক্রের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে অন্তর্ভূক্ত করার পর আর বের করা যায়নি।
একাডেমিক কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে পূর্বের ন্যায় নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। বর্তমান শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
জিএসটি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষক সমিতি বলেন, প্রথম থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এই পরীক্ষা পদ্ধতির কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। আর্থিক অস্বচ্ছতা, দীর্ঘসূত্রিতা, আসন ফাঁকা, সেশনজটসহ নানা অসংহতি নিয়ে শিক্ষক সমিতি কথা তুলেছে। দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছের বাহিরে রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে জিএসটি গঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিতীয় শ্রেনীর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রমাণ করার অপপ্রয়াস ছিলো।
শিক্ষক সমিতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অধিক টাকা পাওয়ার আশায় জিএসটির বাহিরে গিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ জিএসটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারন হিসেবে বলেন,
১.যেখানে স্বতন্ত্র ব্যবস্থায় তিনমাসের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে ক্লাস শুরু করা যায় সেখানে জিএসটিতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে অতিরিক্ত এক বছর চলে যায়। যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
২.শিক্ষার্থীদের পরিবারের ব্যয় ও ভোগান্তি কমার কথা বলা হলেও বাস্তবে ব্যয় এবং ভোগান্তি কোনোটাই কমে নাই। প্রথম ধাপে ১৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। পরে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের জন্য ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হয়। চারটা বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করলে তাকে শুরুতেই ৩৫০০ টাকা খরচ করে ফেলতে হয়।
৩. চান্স পাওয়ার পর শুরু হয় নতুন ভোগান্তি। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দোড়াদোড়ি করে শিক্ষার্থীর পরিবার আরো বেশি সমস্যায় পড়ে এবং অর্থ ব্যয় হয়। অনেক পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনলাইনের সুবিধা বঞ্চিত থাকার কারণে চান্স পাওয়ার পরও পরিপূর্ণ তথ্যের অভাবে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে হতাশাগ্রস্থ হয় এবং কারো কারো শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায়। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাগজপত্র আনা নেয়া করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত ক্লাস শুরু করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়না। আমরা যখন স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি তখন বছরের শুরুতে ক্লাস শুরু করেছি। আর জিএসটিতে আসার পর বছরের শেষদিকেও ক্লাস শুরু করা যায়না। কারণ কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা থাকলে মাইগ্রেশনে যেতে হয়, এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন পূরণ হওয়া ছাড়া ক্লাস শুরু করা যায়না। যেকোনো সময় মাইগ্রেশন হয়ে শিক্ষার্থী চলে আসতে পারে। ক্লাস শুরু করে দিলে তারা এসে বিপদে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী এইজন্য ড্রপআউটের শিকার হচ্ছে।
৫. ক্লাস শুরু করার অনেক পরেও কিছু ছাত্র ভর্তি হতে আসে। যারা নতুন করে আসে তারা সেমিস্টারের মাঝখান থেকে শুরু করে কোনোভাবেই অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে আগাতে পারেনা। ফলে অসম প্রতিযোগীতা সৃষ্টি হয়। যা মোটেও কাম্য নয়।
৬. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মনে করেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য শিক্ষার্থীদের পাচ্ছেনা। কোয়ালিফাইড শিক্ষার্থীরা গুচ্ছের নানান ঝামেলার কারণে আবেদন করছেনা।
৭. গুচ্ছের কারণে শিক্ষার্থীরা এক বছরের সেশন জট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ থেকে সুবিধা নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মনে করে এহেন কর্মকান্ডের মাধ্যমে একটি চক্র বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে।
৮. অন্যদিকে গুচ্ছের বেড়াজালে প্রতি বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সীট খালি থাকে। যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চার বছরে ৩৬০ টি আসন ফাঁকা ছিলো। যা মোটেও কাম্য নয়।
৯. নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে। গুচ্ছভুক্ত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ২য় ও তৃতীয় সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মেনে নিতে পারেনা।
শিক্ষক সমিতি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে যে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা রয়েছে তাতে সম্পৃক্ত হবেনা। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জারিকরা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকার ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি তৈরি করলে এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে এবং সুন্দর ব্যবস্থাপনা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সেক্ষেত্রে সম্মতি দেবেন।