আনিস স্যারকে নিয়ে কিছু কথা

  • ড. আতিউর রহমান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অধ্যাপক আনিসুর রহমান (১৯৩৩-২০২৫)

অধ্যাপক আনিসুর রহমান (১৯৩৩-২০২৫)

হঠাৎ করেই খবর পেলাম আমাদের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুর রহমান পরিণত বয়সেই শেষ বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। গত দশ-পনেরো বছর ধরে পণ করেছিলেন যে তিনি অজ্ঞাতবাসেই থাকবেন। পাবলিক স্পেসে আর আসবেন না। এই কথাটি আমি আজ থেকে দশ বছর আগে তাঁর মুখ থেকেই শুনেছিলাম।

স্যারের যে আত্মপ্রত্যয় তাতে আমি সত্যি বিশ্বাস করেছিলাম তাঁকে আর আমরা প্রকাশ্যে পাবো না। বাস্তবেও তাই হলো। আকাশ আর ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদকে নিয়ে এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম তাঁর সেগুনবাগিচার ফ্ল্যাটে। আমি গিয়েছিলাম স্যারকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার গ্রহণে রাজি করানোর জন্যে। ইতোমধ্যে আমরা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও মোশাররফ হোসেন স্যারকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার দিতে পেরেছিলাম।

বিজ্ঞাপন

প্রথিতযশা চার অধ্যাপকের মধ্যে তখনও আনিস স্যারকে এই পুরস্কার দিতে পারি নি। আকাশকে বললাম চলো একসঙ্গে চেষ্টা করি রাজী করাতে পারি কিনা। খলিক ভাইকেও অনুরোধ করলাম ঐ সন্ধ্যায় স্যারের বাসায় আসতে। আমি মতিঝিল থেকে অফিস শেষ করে সন্ধ্যেবেলা পৌঁছুলাম স্যারের বাসায়। একেবারে সাদামাটা বাড়ি। এমন কি একজন কাজের মানুষও নেই।

আমি ভয়ে ভয়ে স্যারকে পুরস্কারটি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলাম। স্যার বললেন “ তোমাকে আমি খুবই পছন্দ করি তা তুমি জানো। কিন্তু আমি এই পুরস্কার নিতে পারবো না। আমি আর জনসম্মুখে যেতে চাই না।” এর পর দুটো বই দেখিয়ে বললেন আমি এই নিয়েই ব্যস্ত। বই দুটো ছিল কি করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া দরকার সেই বিষয়ে। এরপর আমরা তিনজনেই আর কোনো কথা না বলে স্যারকে তাঁর মতো করে জীবনযাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দিয়ে বের হয়ে এলাম।

বিজ্ঞাপন

এরপর আর আমার সাহস হয়নি স্যারের সাথে ফের দেখা করার। স্যারকে পুরস্কারটি না দিতে পেরে নিশ্চয় কষ্ট পেয়েছিলাম। চার তারকা অর্থনীতিবিদের একজনকে তালিকায় যুক্ত না করতে পারার দুঃখ আজও রয়ে গেছে। তবে সে বছর অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ( মরনোত্তর) এবং ড. স্বদেশ বোসকে যৌথভাবে পুরস্কারটি তুলে দিতে পেরেছিলাম বলে দুঃখ খানিকটা হলেও কমেছিল। এরপর তো চলেই এলাম বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে। এমনি ছিলেন আমাদের আনিস স্যার। তিনি তাত্বিক জ্ঞানে যেমন ছিলেন অতুলনীয় তেমনি ছিলেন জীবনঘন শিক্ষা দানে অগ্রগামী।

সত্তরে স্যারকে মাইক্রো অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। প্রায় মাস খানিক ধরে তিনি আমাদের লিমিট ও ডিরাইভেটিভ রপ্ত করিয়েছিলেন। বলতেন এই কনসেপ্টদুটো বুঝলে আধুনিক অর্থনীতি বুঝতে তোমাদের অসুবিধা হবে না। এর আগে তিনি ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ স্থাপন করে অনেক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদের সূচনালগ্নের গুরুর দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। হার্ভার্ড থেকে তিন বছরের মধ্যেই সংক্ষিপ্ততম পিএইচডি থিসিস ( সম্ভবত ৬৫ পৃষ্ঠার) লিখে দেশে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ের আইয়ুব-মোনায়েম ঘেষা উপাচার্যের সাথে বনিবনা না হবার কারণে চাকুরি ছেড়ে দিয়েই চলে যান হনোলুলুর ইষ্ট-ওয়েষ্ট সেনটারে। ইসলামাবাদ হয়ে ফের ফিরে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তখন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী।এর আগে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন তখন পূর্ব পাকিস্তান দারুন বৈষম্যের শিকার। তাই অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, মাযহারুল হক, ড. সাদেক, হাবিবুর রহমানসহ সহকর্মীদের নিয়ে দুই অর্থনীতির ভিত্তি বিশ্লেষণে দারুন তৎপর তিনি। তার পিএইচডি থিসিসও ছিল বৈষম্যের অর্থনীতি নিয়েই।

পাকিস্তানে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দলিলের প্রস্তুতের জন্য গঠিত প্যানেলভুক্ত অর্থনীতিবিদ হিসেবে তারা এমন শোরগোল তুলেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত আলাদা করেই তাদের প্রতিবেদন দিতে হয়। পশ্চিম পাকিস্তানী অর্থনীতিবিদদের সাথে কিছুতেই মতের মিল হচ্ছিল না। তাঁদের এই ভাবনায় পুরো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, ছাত্রসমাজ এবং বুদ্ধিজীবী মহল এতোটায় উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে শেষ পর্যন্ত প্রায় সকলেই শেখ মুজিবের ছয়দফার আবেদনে সাড়া দেয়।

বাঙালির মন আলাদা করে স্বদেশ ভাবনায় মগ্ন হতে শুরু করে। তাই যখন পঁচিশে মার্চে অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলো তখন আনিস স্যারেরা আক্রান্ত। ক্রল করে করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েছিলেন মৃত্যুর উপত্যকা পেরিয়ে। মঈদুল হাসান ও মোখলেসুর রহমান সিধু ভাইয়ের সহযোগিতায় তিনি এবং রেহমান সোবহান কোনোমতে সীমান্ত পারি দিয়ে আগরতলা পৌঁছেছিলেন।

পথে অবাঙালি বলে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হস্তক্ষেপে তারা জীবন নিয়েই ওপারে যেতে পেরেছিলেন। আগরতলা থেকে দিল্লি, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বাড়িতে। তাঁর মাধ্যমেই আরেক অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্রের সাথে পরিচয়। তিনি তখন সরকারে। তাঁর মাধ্যমেই কথা হয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রিন্সিপল সেক্রেটারি পিএন হাকসারের সাথে। বাংলাদেশের এই দুই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদের সাথে আলাপের পরেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দিন ও এম আমীরুল ইসলামের সাথে মিটিং হয়। আর এভাবেই সূচনা হয় মুজিবনগর সরকারের।

একাত্তরের সতেরই এপ্রিল ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতার ঘোষনার মর্মবানী বা প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স। এরপর আমাদের আনিস স্যার ও রেহমান স্যার মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। সেখানে তারা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও অন্যান্য প্রবাসী বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ মিলে কংগ্রেস ও সিনেটে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। তারই অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তানকে দেয় বিশ্বব্যাংকের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে সক্ষম হন।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। সেখানেও আনিস স্যার সমাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী কর্মসূচি, ভূমি সংস্কার এবং স্বেচ্ছাশ্রমে দেশ গড়ার নানা কাজের পক্ষে কথা বলেন। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সময়টায় যে কাজ তিনি সরকারে থাকতে পেরে উঠতে পারেন নি তা তাঁর ছাত্রদের নিয়ে ফের বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জিরাবো গ্রামে ছাত্রদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান চাষের কাজে লেগে পড়েন। দুর্ভিক্ষের মোকাবেলা করার জন্য ছাত্রদের নিয়ে ব্রাম্মনবাড়িয়ার গ্রামে আদর্শ নিয়মে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেন। রংপুরের কুঁজিপুকুর গ্রামে সমবায় কর্মসূচির মাধ্যমে নুর মোহাম্মদ মন্ডল যে অভানীয় শিক্ষা ও উন্নয়ন ঘিরে মানবিক উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন তার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

মানুষের পাশে থেকে মানুষের অংশগ্রহনে কী করে সাধারণ মানুষের উন্নতি করা সম্ভব সেই সংগ্রাম তিনি আজীবন করে গেছেন। আইএলও’র অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা কর্মসূচির অধীনে তিনি এশিয়া-আফ্রিকার নানা দেশে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভারতে ‘ভূমিসেনা’ কর্মসূচির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ভূমিসংস্কারের নীরিক্ষা করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ বা রিব গঠনেও ভূমিকা রাখেন। আমাদের সমুন্নয়েও তিনি বসতেন।

আমরা যে অংশগ্রহণমূলক গবেষণার মাধ্যমে দারিদ্র্যের বিকল্প মানবিক সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করছিলাম তা তিনি আন্তরিক ভাবেই সমর্থন করেছিলেন। আমাদের কাজের ওপর তিনি হলিডেতে একটি লেখাও লিখেছিলেন। ঐ সময়টায় তিনি আমাকে হৃদয় দিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে বলেছিলেন। ফ্রিটজফ ক্যাপ্রার দু’একটি বই দিয়েছিলেন নতুন চোখে পরিবেশকে দেখতে (ফ্রিটজফ ক্যাপ্রা অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক, পদার্থবিদ , সিস্টেম তত্ত্ববিদ এবং গভীর পরিবেশবিদ। তাঁর অন্যতম গ্রন্থ ‘দ্য ওয়েব অফ লাইফ: এ নিউ সায়েন্টিফিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ লিভিং সিস্টেমস’, ‘হিডেন কানেকশনস’, ‘গ্রিন পলিটিক্স’)। আমরা চেষ্টা করেছি প্রকৃতি ও পরিবেশকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি দেবার জন্য স্যারের কাছে যারপরনাই কৃতজ্ঞ।

এক সময় তিনি মূলধারার অর্থনীতি চর্চা করতেন। পুঁজিতত্ব, বৈষম্য, প্রযুক্তির পছন্দ— এমন বিষয় নিয়ে বিশ্বসেরা অর্থনীতির জর্নালে লিখতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সনাতনী অর্থনীতি চর্চা ছেড়ে দিলেন। রবীন্দ্রনাথের গান এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ভাবনা তাকে বেশি আকৃষ্ট করতে শুর করলো। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে তিনি তাঁর মতো করে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করতেন।

আশির দশকের মাঝামাঝি কুষ্টিয়ায় শিয়ালদহে গিয়েছিলাম রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সম্মেলনে। স্যারও গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গ্রামীণ উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ পড়েছিলাম। স্যার খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। স্যার শুনতেই বেশি পছন্দ করতেন। বলতে চাইতেন না। পরে অবশ্য আমাকে রবীন্দ্রনাথের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে কাজ করে যেতে বলেছেন।

আমি চেষ্টা করেছি স্যার...আপনি এই পৃথিবির আলো বাতাস ছেড়ে চলে গেলেন। আর কে উৎসাহ দেবেন আমাদের এসব সৃজনশীল কাজে?

তবে তিনি তাঁর সৃজনশীল ভাবনার অনেক বীজ বুনে গেছেন বিভিন্ন লেখায়। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন এক বহুমাত্রিক প্রতিভা। যাঁকে বলা যায় রেঁনাসাস ব্যক্তিত্ব। একটু জেদি। এক রোখা। কিন্তু মনে প্রাণে মানবদরদী। জন্মে ছিলেন রুপোর চামচ মুখে নিয়ে। কিন্তু আজীবন নিবেদিত থেকেছেন সবহারাদের কল্যাণ ভাবনায়।

শুধু তত্ত্বকথা নয় বাস্তবেও কী করে এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করা যায় সেকথা লিখেছেন অন্তর দিয়ে। তার লেখা বইগুলোর কয়েকটির নাম উল্লেখ করলেই বোঝা যায় কী গহীনে ভাবতেন প্রান্তজনের কথা। সেই সব ভাবনার প্রতিফলন দেখতে পাই তাঁর লেখা বইতে।

যেমন তিনি রেখে গেছেন আমাদের মনোজগতের উন্মেষের জন্য— ‘উন্নয়ন জিজ্ঞাসা’, ‘অপহৃত বাংলাদেশ’, ‘পিপলস সেলফ ডেভেলপমেন্ট’, ‘অসীমের স্পন্দন-রবীন্দ্রসংগীত বোধ ও সাধনা’, ‘যে আগুন জ্বলেছিল– মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ’, ‘সংস অফ টেগর, ফিলোসফি, সিলেক্টেড ট্রান্সলেশনস, পেইন্টিংস’, ‘পার্টিসিপেশন অব দি রুরাল পুয়োর ইন ডেভেলপমেন্ট’, ‘মাই স্টোরি অব ১৯৭১’, ‘একুশে ও স্বাধীনতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সমাজবাস্তবতা’, ‘পথে যা পেয়েছি-১’, ‘পথে যা পেয়েছি-২’, ‘দ্য লস্ট মোমেন্ট: ড্রিমস উইথ অ্যা নেশন বর্ন থ্রু ফায়ার’ ইত্যাদি ।

এসব বই শুধু সমাজতত্ত্ব ও অর্থনীতির শিক্ষার্থী ও রবীন্দ্রভক্তদের জন্যই যে শুধু মূল্যবান তাই নয়। যে কোনো পাঠককেরই মনকে নাড়া দেবে এসব বই। সমাজ মাধ্যমে বুদ হয়ে পড়ে থাকা তরুণ প্রজন্মের পক্ষে এসব বই খুঁজে বের করা কতোটা সম্ভব হবে আমি জানি না। কিন্তু এসব বইয়ের মাঝেই বেঁচে থাকবেন আমাদের আনিস স্যার।

আমার বড়ই সৌভাগ্য তিনি এবং মীর্জা নুরুল হুদা স্যার সত্তরে আমার সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগে ভর্তির জন্য। আমি যেহেতু ঢাকা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম দশ জনের মধ্যে ছিলাম তাই হুদা স্যার আমাকে পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন বিজ্ঞানে না গিয়ে অর্থনীতিতে কেন আসবার চেষ্টা করছি সে প্রশ্নটি করেছিলেন। বয়স কম। তবুও বলেছিলাম বিজ্ঞানের ভিত্তি আছে বলেই অর্থনীতিতে ভালো করবো বলে আশা করি।

আনিস স্যার মুচকি মুচকি হাসছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সস্নেহেই অর্থনীতি চর্চা করেছি আজীবন। আনিস স্যার আমাকে অর্থনীতি ও উন্নয়নকে মানবিকতার চোখে দেখতে বলতেন। জানিনা কতোটা পেরেছি তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করতে। তবে রবীন্দ্রনাথের চোখ দিয়ে উন্নয়নকে প্রান্তজনের সখা করার সামান্য হলেও সচেষ্ট থেকেছি সারাটা জীবন। আনিস স্যারের এই বিদায় আমার মনে যে বিপুল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে তা সহসাই পূরণ হবার নয়। তাঁর আত্মা শান্তিতে ঘুমাক সেই প্রার্থনাই করছি বিধাতার কাছে।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।