উন্নয়নের গতিধারা: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্ভাবনা

  • অধ্যাপক ড. সায়েদা আক্তার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উন্নয়নের গতিধারা: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্ভাবনা

উন্নয়নের গতিধারা: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্ভাবনা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের দেশগুলো ভারত ও চীনের সাংস্কৃতিক প্রভাবের পাশাপাশি ধর্মীয় এবং সামাজিক বৈচিত্র্যের কারণে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। যেমন, ইন্দোনেশিয়া মুসলিম সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে অন্যান্য দেশগুলো হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জাতীয়তাবোধের উত্থান, তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ, এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই দেশগুলো নতুন রাষ্ট্র গঠনে অগ্রসর হয়। তবে স্বাধীনতার পরও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো উন্নয়নের গতিধারায় নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যে বাধাগুলো পরিলক্ষিত হয় তা রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিকভাবে জটিল।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের অভাব এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা। এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে উপজাতীয়, বংশগত, এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যের কারণে একাত্মতা তৈরি করা কঠিন। এটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

গণতন্ত্রের চর্চা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের সক্রিয় ভূমিকার অভাব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সংহতির সংকট সৃষ্টি করে। স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠী এবং দুর্নীতি এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সরকারি সম্পদ ও সেবার সঠিক বণ্টনের অভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সামাজিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। সৎ ও দক্ষ প্রশাসনের অভাব এই সমস্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে।

বিজ্ঞাপন

ধর্ম ও ভাষার পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা এবংসাংস্কৃতিক বিভাজন সৃষ্টি করে। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই অঞ্চলগুলোতে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং এর জন্যে গণতন্ত্র চর্চা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সুশাসন অপরিহার্য। শাসনব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করতে রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন।

উন্নয়ন কর্মসূচিতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার প্রসার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এছাড়াও ধর্ম ও ভাষার বৈচিত্র্যকে উন্নয়নের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি বাড়ানো সম্ভব। সার্বিক উন্নয়নের জন্যে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

যেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে পারে। সর্বোপরি, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে সুশাসন, জাতীয় ঐক্য, এবং জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে এইঅঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এইউবি)। 
ইমেইল: [email protected]