শিল্পে গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব
নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ঘনমিটার ৭৫.৭২ টাকা দর করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা, তবে বিদ্যমান শিল্পকারখানায় গ্যাসের দর ৩০ টাকা (প্রতি ঘনমিটার) বহাল থাকার কথা বলা হয়েছে। বিগত ৩ মাসের এলএনজি আমদানির দর বিবেচনায় এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা হয়েছে।
নিয়ম হচ্ছে প্রস্তাব পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করবে বিইআরসি। যৌক্তিকতা পাওয়া গেলে কমিশনের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে মূল্যায়ন কমিটি (বিইআরসির টিম) গঠন করা হবে। মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর গণশুনানি নিয়ে আদেশ দেবে বিইআরসি।
পেট্রোবাংলা তার প্রস্তাবে বলেছে, গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫ শতাংশের মতো, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যা, ২০৩০-৩১ অর্থবছরে ৭৫ শতাংশ দাঁড়াবে।
প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। দেশীয় উৎপাদন সময়ের সঙ্গে হ্রাস পাওয়া এবং গ্যাসের চাহিদা পুরণে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানি সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর (২০২৪) পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় ৩২টি এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ১২ কার্গোসহ মোট ৪৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।
চলতি জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় আরও ২৮টি এবং স্পর্ট মার্কেট থেকে ২৯টিসহ চলতি অর্থবছরে মোট ১০১ কার্গো আমদানি করা হলে প্রাক্কলিত ঘাটতি হবে ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০২৫ সালে যদি ১১৫ কার্গো আমদানি বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রায় ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঘাটতি হবে। উক্ত ঘাটতি হ্রাসকল্পে প্রাথমিকভাবে শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য নতুন গ্যাস সংযোগ এবং লোডবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল্যহার নির্ধারণ করা যেতে পারে।
পেট্রোবাংলা তার প্রস্তাবে বলেছে, পুর্ববর্তী ৩ মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দীর্ঘমেয়াদী স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা এলএনজির গড় মূল্য পড়েছে ৭৫.৭২ টাকা। জুলাইয়ে ৬৪.২৫ টাকা, আগস্টে ৬৫.৭৪ টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ৬১.০৮ টাকা, তিন মাসের গড় দর দাঁড়ায় ৬৩.৫৮ টাকা এর সঙ্গে ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ ৯.৮৮ টাকা যোগকরে দাম পড়েছে ৭৫.৭২ টাকা।
পেট্রোবাংলা লিখেছে, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক)। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড়ে ২ হাজার ৪৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে, আর কমে গেলে কমবে। দুই ধরণের দর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত (প্রতিশ্রুত) কিন্তু সংযোগ চালু হয় নি এমন গ্রাহকদের এক রকম দর, আর নতুন শিল্পে ভিন্ন দর নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। প্রতিশ্রুত গ্রাহকের অর্ধেক গ্যাসের দর হবে বিদ্যমান দরের সমান, আর অর্ধেকের জন্য আমদানি মূল্য। বর্তমানে শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা, আর ক্যাপটিভে ৩১.৭৫ টাকা। সে হিসেবে বিদ্যমান শিল্প ৩০ টাকায় গ্যাস পেলেও একই ধরণের নতুন শিল্পকে ৭৫.৭২ টাকা দিয়ে গ্যাস কিনতে হবে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। দেশীয় এসব উৎস থেকে দৈনিক কমবেশি ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
নতুন ফর্মুলা শিল্পে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে, বিদ্যুমান শিল্প পাবে কমদামে, আর নতুন শিল্প বেশিদামে গ্যাস কিনে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এতে নতুন শিল্প নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।