আগুন থেকে বায়ু দূষণে বছরে ১৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু
আগুন থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বছরে ১ দশমিক ৫ (১৫ লাখ) মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি পড়েছে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার এক সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য ল্যানসেটের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়।
জার্নালটি জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দাবানল আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হওয়ার কারণে আগামী বছরগুলোয় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
গবেষকদের আন্তর্জাতিক দল 'ল্যান্ডস্কেপ ফায়ার' এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রাকৃতিকভাবে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ও কৃষি জমিতে নিয়ন্ত্রিতভাবে মানবসৃষ্ট আগুনের কারণে এই বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয়।
গবেষকরা বলছেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হৃদরোগের কারণে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের সবাই বায়ু দূষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো। এছাড়াও আগুনের মাধ্যমে বাতাসে ছঁড়িয়ে পড়া ধোঁয়া ও কণা থেকে সৃষ্ট শ্বাসকষ্ট ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এ সমীক্ষায় বিশ্বজুড়ে মারা যাওয়া কারণগুলোর মধ্যে আগুন থেকে বায়ু দূষণের কারণে মারা যাওয়া অন্যতম। যাতে দেখা যায়, বছরে ১ দশমিক ৫ (১৫ লাখ) মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুর ৯০ শতাংশেরও বেশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই কেবল আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে ঘটেছে।
এর প্রভাবে চীন, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং নাইজেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে ল্যানসেটের গবেষকরা, দাবানলে বিপুল মৃত্যুর সংখ্যা মোকাবিলায় ‘জরুরি পদক্ষেপ’ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বাতাস ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর কারণ হিসেব দিল্লির উত্তরাঞ্চলে খামারের জমি বেআইনিভাবে পুড়িয়ে ফেলার জন্য আংশিকভাবে ক্ষতিকারক ধোঁয়াশাকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অধিকতর ‘জলবায়ু বৈষম্য’কে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে যারা সবচেয়ে কম অবদান রেখেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
যদিও এর থেকে মুক্তি পেতে কিছু নির্দেশনার কথাও বলেছে গবেষকরা। তারা বলছে, কিছু উপায়ে মানুষ আগুন থেকে ধোঁয়া এড়াতে পারে। যেমন এলাকা থেকে দূরে সরে যাওয়া, এয়ার পিউরিফায়ার ও মাস্ক ব্যবহার করা বা বাড়ির ভিতরে থাকা।
তবে এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা গরীব দেশগুলোর মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। তাই তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির মানুষের জন্য আরও আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র: এএফপি, ফ্রান্স২৪