তুষারপাতে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের অনেকাংশ। ভারি তুষারে ঢাকা পড়েছে রাস্তা-ঘাট জনপদ। পূর্বাভাস ছিলো তুষারপাতের, সে নিয়েও প্রস্তুতিও ছিলো।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন ছিলো তেমনই টানা প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে তুষারপাত চলছে। আরও প্রায় ১২ ঘণ্টা এ পরিস্থিতি চলবে।
আকাশ থেকে ঝিরঝির করে নেমে আসছে তুষার। কখনো ছোট ছোট চাকা বেঁধে। কখনো বা ধুলি কণার মতো।
কিন্তু যেভাবেই পড়ুক তা জমে যাচ্ছে মাটিতে। তাপমাত্রা মাইনাস তিন। ফলে তুষার গলে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণেই তা জমে জমে ইঞ্চি ইঞ্চি করে প্রায় ১ ফুট সমান উঁচু হয়ে গেছে।
তাতে ঢাকা পড়েছে, সড়ক, পার্কিংলট, ফাঁকা মাঠ। গাছের শাখায় শাখায় জমেছে তুষার। সবুজ পাতা হারিয়ে ন্যাড়া গাছগুলো এখন পেয়েছে সাদা তুষারের চাদর।
গাড়িগুলো ঢাকা পড়ে আছে তুষারে। যেনো সব গাড়িরই এখন এক রং- সাদা।
আগে থেকেই জানা থাকায়, প্রস্তুতিও তেমরই ছিলো কোনো কোনো গাড়ির গ্লাস ঢেকে রাখা হয়েছে পলিথিন মুড়িয়ে, যাতে তুষার শেষে সহজেই পরিষ্কার করা যায়। ওয়াইপারগুলো খাড়া করে রেখেছেন কেউ কেউ। যাতে তুষার শেষে অন্ত সেটি ভালো কাজ করে।
এছাড়াও প্রস্তুতি হিসেবে ছিলো- দোকান পাট থেকে খাবার সংগ্রহ করে রাখা। গতকাল স্থানীয় একটি ওয়ালমার্টে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ডিম-দুধের মতো অতি প্রয়োজনীয় খাবার সব বিক্রি হয়ে গেছে।
ভার্জিনিয়ায় আরও প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে তুষারপাত হবে।
তাতে পরিস্থিতি কি দঁাড়াবে তা এখনো অনুমেয় নয়। এরই মধ্যে সকালে থেকে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ তাদের গাড়ির ওপর থেকে জমে থাকা তুষার সরিয়ে কাজে রওয়ানা দিয়েছেন।
তুষারে জনজীবন ব্যহত হলেও তা থেমে থাকার উপায় নেই। তাই হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপামাত্রায়, তুষার সরিয়ে, গাড়ি হিট করে নিয়ে কাজে ছুটছেন কেউ কেউ।
অনেকেই অবশ্য ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নোটিফিকেশন পেয়ে বাড়ি থেকে কাজ করছেন। তবে ভার্জিনিয়ার স্কুল কলেজগুলো আগে থেকে এই দিন বন্ধ রাখার নোটিফিকেশন পাঠিয়েছে। ফলে সকালে স্কুল বাসের আনাগোনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গোটা ইস্ট কোস্ট জুড়েই এই তুষারপাত চলছে। কোথাও কোথাও তা তুষার ঝড়ে রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। এগুলো হচ্ছে- ক্যানসাস, মিসৌরি, কেনটাকি, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও আরকানসাস। নিউজার্সিরও কিছু অংশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
ওয়াশিংটন ডিসিতে কোনো কোন স্থানে এরই মধ্যে ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষার জমেছে। মেরিল্যান্ডেরও একই অবস্থা বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে এরই মধ্যে ১৩০০'র বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন একটি পোলার ভোরটেক্সের কারছে আবহাওয়ার এই চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর্কটিক পর্বতমালায় সৃষ্ট একটি তীব্র শীতাঞ্চল থেকেও সঞ্চারিত হচ্ছে শীতল বাতাস। যা গোটা পূর্বাঞল হয়ে মধ্য আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। এটাই এই ভারি তুষারপাতের কারণ।
সাধারণত উত্তর মেরুতে এই পোলার ভোরটেক্স দেখা যায়। তবে এটি কখনো কখনো স্থান পরিবর্তন করে কিংবা পরিধি বিস্তৃত করে। ফলে দক্ষিণে তাপমাত্রা কমে ও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়।
এবার পোলার ভোরটেক্সটি আমেরিকার দিকে বেড়ে গেছে। এবং ক্রমেই তা আরও পূবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামী আরও কিছু দিন এমন তুষারপাত ও প্রকট শীতের অভিজ্ঞতা নিতে হবে এ অঞ্চলের মানুষের।