গাজায় দুই শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ধ্বংস করেছে ইসরায়েল
অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় মুছে ফেলার পদ্ধতিগত কৌশল প্রদর্শন করছে দখলদার ইসরায়েল। এরই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে ২০৬টি অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংস, ক্ষতিসাধন ও ভাংচুর করেছে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল থাওয়াবতেহ আনাদোলুকে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী দ্বারা ধ্বংস, ভাংচুর, লুটপাট এবং চুরি থেকে ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোও রেহাই পায়নি। কিছু স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, অন্যগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব স্থাপনা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার উদ্দেশ্য হলো, ফিলিস্তিনিদের পরিচয় মুছে ফেলা, এটা যুদ্ধের একটি কৌশলও বটে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ধ্বংস হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গ্রেট ওমারি মসজিদ, জাবালিয়ায় বাইজেনটাইন চার্চ, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-খাদিরের মাজার এবং উত্তর-পশ্চিমে ব্লাখিয়া বাইজেনটাইন কবরস্থান।
এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে গ্রীক অর্থোডক্স সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চ, ৪০০ বছরের পুরোনো আল-সাক্কা হাউস এবং গাজার প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি সাইয়্যেদ আল হাশিম মসজিদ।
ইসরায়েল কর্তৃক ধ্বংস হওয়া প্রাচীন ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর কিছু কিছু ফিনিশিয়ান এবং রোমান যুগের, বেশ কিছু খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রিস্টাব্দ ১৪০০ সালের মধ্যকার, আর কিছু ৪০০ বছর আগে নির্মিত হয়।
গাজা একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর। যা মিসরীয় ফারাও, গ্রীক, রোমান এবং বাইজেনটাইন এবং তারপরে ইসলামি যুগে অটোম্যান শাসনসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্য এবং সভ্যতার শাসনের অধীনে এসেছিল।
থাওয়াবতেহ বলেন, ‘এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণ, তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ক্ষতি করা।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করতে, ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছা ভঙ্গ করতে এবং তার জনগণের জমি খালি করার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে দখলকে সুসংহত করতে এবং একটি নতুন বাস্তবতা আরোপ করতে চায়।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ইসরায়েল প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১ লাখের বেশি মানুষ।
গাজায় গণহত্যার দ্বিতীয় বছর ইসরায়েল ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সম্মুখীন হয়েছে। তার পরও যুদ্ধে বন্ধ করেনি, উল্টো ইসরায়েল অনাহার কৌশল এবং মানবিক সহায়তা বিতরণে বাধা দিয়ে গাজার মানুষকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
গত মাসে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।