অস্ট্রিয়ায় ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে মুসলমানরা
মুসলিমদের প্রতি নানাবিধ বৈষম্যের প্রেক্ষিতে সমালোচকরা বলেন, মানবাধিকারের সলিলসমাধি হতে চলেছে ভূমধ্যসাগরে। ইউরোপের নেতাদের মুসলিম নির্যাতন মুসলিম দেশে চালানো আগ্রাসনের বিষয়ে লোকদেখানো কিছু তৎপরতা ও বিভিন্ন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।
বিশ্বে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সদা সোচ্চার ইউরোপীয়দের দ্বিচারিতা প্রকাশ পেল এক জরিপে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, অস্ট্রিয়ার মুসলমানরা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চস্তরের বৈষম্যের শিকার।
পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া আল্পস পর্বতমালার ওপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকা পর্বতময়। অস্ট্রিয়াতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান।
২০২৩ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, দেশটির ৬৭ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। তবে গির্জায় যাওয়ার হার ধীরে ধীরে কমছে। লুথেরান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার ২ শতাংশ। আর অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যার হার ৮ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া অস্ট্রিয়াতে স্বল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও ইহুদি বসবাস করেন।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অস্ট্রিয়ায় ইসলাম ধর্মের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মুসলমানদের বেশিরভাগই তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসী বা তুর্কীদের বংশধর। বেসরকারি সূত্রের দাবি, দেশটিতে প্রায় ছয় শ মসজিদ ও নামাজের জায়গা রয়েছে। তবে দুই বছর আগে অস্ট্রিয়া ৭টি মসজিদ এবং বিদেশের অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ছাড়া ইউরোপে পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, অস্ট্রিয়ার মুসলমানরা এই মহাদেশে সর্বোচ্চমাত্রায় বৈষম্যের শিকার।
অস্ট্রিয়ায় ২০২৩ সালে ইসলামবিরোধী বর্ণবাদের ১ হাজার ৫২২টি মামলা রেকর্ড করা হয়। যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি।
অস্ট্রিয়ান সংবাদপত্র ডারস্ট্যান্ডার্ড অনুসারে, ইউরোপীয় মানবাধিকার সংস্থা (এফআরএ) দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রিয়ার মুসলমানরা ইউরোপে সর্বোচ্চস্তরের বৈষম্যের শিকার। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা গত পাঁচ বছরে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
অস্ট্রিয়ার মুসলিম নেতাদের দাবি, এমনিতেই দেশটিতে চরম বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলমানরা। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ও কট্টর ডানপন্থি উগ্রবাদীরা প্রায়ই নিরপরাধ মুসলমানদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে।
অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটি ইন অস্ট্রিয়া (আইজিজিওই) এসব কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কজনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ওই জরিপে বলা হয়েছে, জার্মানির ৭১ শতাংশ, সুইডেন এবং স্পেনে যথাক্রমে ২৩ শতাংশ ও ৩১ শতাংশ মুসলমান নিজেদের প্রতি বৈষম্যের কথা স্বীকার করেছেন।
ফ্রান্সে ৪৩ শতাংশ মুসলমান বৈষম্যের শিকার। জরিপে দাবি করা হয়েছে, মুসলিমরা ইসলামফোবিয়া থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন।
ইউরোপজুড়ে মুসলমানদের বৈষম্য প্রসঙ্গে স্প্যানিশ অর্গানাইজেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল ল-এর এডভাইজার এম ইউসুফ ওলিড বলেন, স্পেনের মুসলমানরা ইসলামোফোবিয়ার মামলা নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী নয়। তাতে অভিযোগকারীদের সমস্যা আরও বাড়ে।
ইউরোপে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির জন্য দুটি প্রধান কারণকে কার্যকর বলে মনে করেন তিনি।
প্রথমটি হলো- সরকারি বিভিন্ন নীতি, যা মুসলমানদের লক্ষ্য করে প্রণয়ন করা হয়। যেমন- স্পেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইন। যা ধরে নেয়, যেকোনো মুসলমান সন্ত্রাসী হতে পারে।
দ্বিতীয় কারণ হলো- ইউরোপজুড়ে অতিডানপন্থী আন্দোলনের উত্থান। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের মেরিন লে পেন এবং ইতালির জর্জিয়া মেলোনির মতো ব্যক্তিত্ব। যারা ইসলামোফোবিয়াকে স্বাভাবিক করতে এবং রাজনৈতিক আলোচনায় এটিকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে।