মানুষের সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি

  • মাওলানা আল আমিন, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের সেবায় তাকওয়া ফাউন্ডেশনের তৎপরতা, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের সেবায় তাকওয়া ফাউন্ডেশনের তৎপরতা, ছবি: সংগৃহীত

হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। তখন আদম সন্তান বলবে, হে আমার রব! আমি কীভাবে আপনার কাছে যেতে পারি, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা অসুস্থ ছিল এবং তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তবে তুমি আমাকে সেখানে পেতে।

আল্লাহতায়ালা আরও বলবেন, হে আদম সন্তান! আমার খাবারের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুমি আমাকে তা দাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রভু! আমি কিভাবে তোমাকে খাওয়াবো, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা ক্ষুধার্ত ছিল এবং তুমি তাকে খাবার দাওনি? তুমি যদি তাকে খাওয়াতে, তবে তার প্রতিদান আমার কাছে পেতে।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে কিছু পান করতে দাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে আপনাকে পান করাবো, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা তৃষ্ণার্ত ছিল এবং তুমি তাকে পান করাওনি? তুমি যদি তাকে পানীয় দিতে, তবে তুমি আমার কাছে এর প্রতিদান পেতে। -সহিহ মুসলিম : ২৫৬৯

ইসলামি স্কলারদের মতে, মানুষের সেবা ও সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা। তার করুণা ও তার নৈকট্য অর্জনের সহজ পথ হলো- শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পৃথিবীকে উন্নত করা। এছাড়া অন্যকে সাহায্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সাহায্য করতে পারি। কোনো অবস্থাতেই ভোগবিলাসী ও স্বার্থপর জীবনযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশা করতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তার নৈকট্যে যাওয়ার পথ হিসেবে অন্যদের সেবা এবং একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ে তোলাকে নির্ধারণ করেছেন। দুঃখী ও বিপন্নদের সাহায্য সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি যাওয়ার একটি পথ।

উল্লেখিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ মানুষের সেবা করার মধ্যেই নিহিত। তাই আমাদের উচিত, প্রতিদিন ছোট ছোট সেবামূলক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া। অসুস্থ, ক্ষুধার্ত কিংবা প্রয়োজনে থাকা মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানো।

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের অনেকেই দুঃখ-কষ্টের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধুমাত্র দান করার চিন্তা করি, কিন্তু দানের বাইরে আরও এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করার মানসিকতা থাকতে হবে। দরিদ্রদের খাওয়ানো, তৃষ্ণার্তদের পান করানো এবং অসুস্থদের সেবা ও সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর অসীম নৈকট্য অর্জন করতে পারি।

এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মানুষের সেবা করার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া অন্যকোনো উদ্দেশ্যের প্রয়োজন নেই। আমাদের সেবামূলক কাজের জন্য কোনো প্রতিদানের আশা করা উচিত নয়। বরং এই কাজগুলোর মাধ্যমেই আমাদের আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া উচিত।

ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, একজন নতুন মা হওয়া নারীকে রান্নায় সাহায্য করা বা প্রতিবেশীর সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইসলামে প্রচার বা সামাজিক প্রভাব দেখানোর প্রয়োজন নেই। এগুলো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা উচিত।

ব্যক্তি ও সমাজে শান্তি ও কল্যাণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের উৎসর্গ করতে হবে। প্রতিটি প্রতিবেশী এবং শহর আমাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আশীর্বাদ ও রহমতের ছোঁয়া পাবে, এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে।