মেরাজের রাত যেভাবে কাটাবেন
লায়লাতুল মেরাজ (মেরাজের রাত) হলো সেই মহান রাত, যেদিন আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশে আজিমে গমন করেন এবং সেখান থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছান। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত।
কোরআনের আলোকে মেরাজের বিবরণ
পবিত্র মেরাজের ঘটনা কোরআন মাজিদে সরাসরি বর্ণিত হয়েছে দুটি সূরায়। সূরা আল ইসরায় (বনী ইসরাইল) ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম পবিত্র সে সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাত্রিকালে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ -সূরা আল ইসরা : ১
এখানে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাতের সফরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আর সূরা আন নাজমে মেরাজের আরও গভীর বর্ণনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিশ্চয়ই তিনি তাকে (জিবরাইলকে) আরেকবার দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। এর নিকটে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া।’ -সূরা আন নাজম : ১৩-১৫
এখানে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন এবং জান্নাত দেখার কথা বলা হয়েছে।
হাদিসের আলোকে মেরাজের বিবরণ
মেরাজের ঘটনাটি হাদিসে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে এর বিশদ বিবরণ রয়েছে।
সাত আসমানের সফর
মেরাজে নবী কারিম (সা.) সাত আসমান পাড়ি দেন এবং বিভিন্ন আসমানে বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যেমন- প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ঈসা (আ.) এবং হজরত ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) ও সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)।
নামাজ ফরজের বিধান
মেরাজে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এই রাতেই নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত হয়েছিল, পরে তা কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে আনা হয়, যা ৫০ ওয়াক্তের সমতুল্য সওয়াব অর্জনের ব্যবস্থা।
জান্নাত-জাহান্নামের দৃশ্য দেখা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মেরাজের সময় জান্নাত ও জাহান্নামের কিছু দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।
শবে মেরাজ উদযাপন ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ
মেরাজের রাতের বিশেষত্ব ও তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না, তবে ইসলামে এ রাত উদযাপনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধান বা পদ্ধতি নেই।
ইবাদত ও দোয়া
কোনো নির্দিষ্ট দিন বা রাতে ইবাদতের বিধান না থাকলেও মুমিনদের উচিত বেশি ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
বিদআত থেকে বাঁচা
সহিহ হাদিসে লায়লাতুল মেরাজ উদযাপন সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো আমলের কথা বলা হয়নি। অতএব, শবে মেরাজ উদযাপনের নামে কোনো নতুন বা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রথা বা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
লায়লাতুল মেরাজ হলো ইসলামের ইতিহাসে একটি অতুলনীয় ঘটনা, যা নবী কারিম (সা.)-এর মর্যাদাকে তুলে ধরেছে। এটি আমাদের জন্য আল্লাহর কুদরত, নবীর (সা.) শ্রেষ্ঠত্ব এবং নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করার একটি সুযোগ।
তবে, মেরাজের রাতে নির্দিষ্টভাবে উদযাপন বা নতুন রীতি অনুসরণের কোনো বিধান নেই। সুতরাং এই রাত স্মরণ করে নিজের ইবাদত-বন্দেগি এবং আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করাই উত্তম।