চুরির ভয়ে ঘর ছাড়ছেন না পানিবন্দিরা

  বন্যা পরিস্থিতি
  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দি মানুষ

লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দি মানুষ

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম। পানিবন্দি হয়েও নিজ ঘরে স্বামী-সন্তানসহ এখনো অবস্থান করছেন মূল্যবান আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

তিনি বলেন, থাকার ঘরসহ চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। চুরি হওয়ার ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা কোন সহায়তাও পাচ্ছি না।

বিজ্ঞাপন

রাবেয়ার পরিবারের মতো জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়েও নিজেদের ঘর আঁকড়ে পড়ে আছেন।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্গম এলাকায় যারা বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের অনেকের কাছেই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন হাজার হাজার প্যাকেট খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) বিতরণ করা হলেও যাতায়াতের দুর্ভোগসহ সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গম এলাকায় অবস্থানকারীরা এর সুফল পাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ২৭ হাজার ৭০০ মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু মানুষ উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে বন্যায় পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ চুরি-ডাকাতির ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পানির কারণে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এতে সেখানকার পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোন বিকল্প নেই। মান্দারী-দিঘলী সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।

এদিকে বন্যার পানি বেড়েই চলছে লক্ষ্মীপুরে। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে যোগ হচ্ছে বৃষ্টির পানি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে জেলাজুড়ে। এতে জেলার সর্বত্রই পানির পরিমাণ অন্তত আরও আধাফুট বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। দুর্ভোগও বেড়ে গেছে বহুগুণ।

এদিকে সরকারিভাবে যে পরিমাণ চাল ও অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তাও অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান। মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় তিনি বলেন, জেলায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ

তিনি জানান, বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিকটন চাল ও ১৬ লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। তবে মেঘনা নদীতে প্রচুর পানি নেমেছে রহমতখালী ও ওয়াপদা খাল হয়ে। এছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জেও পানি কমছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীর পানি এসে ভুলুয়ার নদীতে যুক্ত হচ্ছে।