চারদিকে পানি, তবু পানির জন্য হাহাকার

  বন্যা পরিস্থিতি
  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাস্তায়, উঠানে, ঘরে কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু পানি। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। অথৈ পানির তল থেকে কেবল মাথা উঁচিয়ে আছে লম্বা লম্বা গাছ। বানভাসি লক্ষ্মীপুরের গ্রামগুলোর চিত্র এখন এমন।

চারিদিকে এতো পানি থাকলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব। থই থই পানির মাঝে বাস করেও সুপেয় পানির নিদারুণ কষ্টে লক্ষ্মীপুরের বানভাসি মানুষেরা।

বিজ্ঞাপন

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি তলিয়ে গেছে নলকূপ। তাই নিরাপদ পানি উঠছে না সেই নলকূপ দিয়ে। ফলে দুর্গত এলাকায় এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে। তবে যে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়, সেখানে কিছুটা বোতলজাত পানির দেখা পান বন্যার্তরা। যদিও তা একেবারে নগণ্য। এজন্য লোকজনও খুব হিসেব করে পানি পান করছেন।

গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুরের বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে নিরাপদ পানির চরম সংকট লক্ষ্য করা গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ টিউবওয়েল পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও যদিও দু-একটি টিউবওয়েল পানির উপরে থাকে, সেখানে হুমড়ি খেয়ে পরছে দুর্গত এলাকার লোকজন। তবে অথৈ পানির মধ্যেও দূরদূরান্তর থেকে পানি বহন করে আনাও কষ্টসাধ্য।

বিজ্ঞাপন

দুর্গত এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন পানযোগ্য পানি খুব কম পাচ্ছেন। তাই কম করে পান করছেন পানি। কেউ কেউ দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনছেন। কেউ আবার বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছেন।

সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম জামিরতলী গ্রামের বাসিন্দা রঙি বাড়ির বাসিন্দা কৃষক মো. আমিন বলেন, খাবার পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেটা পাই, কম কম করে পান করি। ত্রাণ হিসেবে বোতলের পানি যথেষ্ট নয়। পরিবারের ৯ জন সদস্য। যতটুকু পাই, তা দিয়ে হয় না। বাড়িতে থাকা চাপকলের পানিতে আর্সেনিক। আগে যে কলের পানি পান করতাম, সেটা ডুবে আছে। তাই পানি সংগ্রহ নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।

তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের থেকে পাওয়া ত্রাণের প্যাকেটের সাথে বোতলজাত পানিও দেয়। সেটা একেবারে নগণ্য।

একই এলাকার বৃদ্ধ মনজু মিয়া বলেন, বাড়ির অদূরে একটি মাদরাসার পাশে টিউবওয়েল আছে। সেখান থেকে বালতি করে পানি নিয়ে আসি। খুব কষ্ট হয়। আবার ত্রাণ হিসেবে এক বোতল পেলে তা দিয়ে কোন মতে চালিয়ে নিই। এ পানি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

আবু তাহের নামে একজন বলেন, ত্রাণ হিসেবে যে দুই এক বোতল পাই। বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি। টিউবওয়েল সব পানির নিচে।

ফিরোজা বেগম নামে এক নারী বলেন, খাবার পানি কেউ হয়তো এক বোতল দেয়। অল্প অল্প করে পান করি। দোকান থেকেও বোতল কিনে আনতে হয়। কিন্তু সেজন্য তো টাকা লাগে। এ সময়ে চাল কেনার টাকা নেই, পানি কেনার টাকা কোথায় পাবো?

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, এলাকার বেশিরভাগ চাপকল পানির নিচে। আমাদের পুরনো বাড়িতে শুধুমাত্র একটি কল এখনো পুরোপুরি ডুবেনি। দূরদূরান্তের লোকজন এবং পাশের একটি আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা ওই চাপকল থেকে পানি সংগ্রহ করে। পানি বহন করতে কষ্ট হয় তাদের।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাই। ওইসব এলাকার লোকজনের মাঝে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখি। অনেকে পানির চাহিদা জানায়। তাই বন্যার্ত এলাকার প্রতি পরিবারের জন্য আমরা ৫ লিটারের বড় বোতলে করে পানি সরবারহ করি।