স্রোতে ভেঙে গেছে সড়ক, ভেসে গেছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট
বন্যা পরিস্থিতিফেনী থেকে: ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলার দরবারপুরের জগৎপুর গ্রাম থেকে আমজাদ ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক ধরে ২ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ চলাচল করে। এছাড়া ফুলগাজী উপজেলাসহ ফেনী জেলা শহর ও পাশের ছাগলনাইয়া উপজেলায় যাওয়ার এক মাত্র সড়ক এটি। তবে উজানের ঢলে মুহুরী নদীর পানির স্রোতে এই সড়কের ১৪ টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। এতে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অন্তত ১ লক্ষ মানুষের।
মুহুরী নদীর তীরবর্তী সড়ক হওয়ায় সরাসরি পানির স্রোত আঘাত করেছে এই সড়কে। এতে সড়ক ভেঙে আশেপাশের অন্তত অর্ধশত দোকান ও শতাধিক ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে স্রোত।
স্থানীয়রা জানান, নতুন মুন্সিরহাট হয়ে জগৎপুর গ্রাম ও আমজাহাট ইউনিয়নের প্রধান সড়কটির ৩ টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। এবং জগৎপুর থেকে দক্ষিন শ্রীচন্দ্রপুর পর্যন্ত আরও ১১ টি স্থান ভেঙে গেছে। ভাঙনের স্থানগুলোতে ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত গর্ত হয়ে গেছে। এতে হেটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়কটির ৩ টি স্থানে ভাঙনের ফলে হাটাচলা করতেও পারছেন না স্থানীয়রা। অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ৪ কি.মি দূরত্বের এ সড়কটিতে যানবাহন চলাচল মোটেও সম্ভব নয়।
আব্দুল আওয়াল বাবুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বানের পানির তীব্র স্রোতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। পাশে মুহুরী নদী হওয়াতে পানির তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। ফলে বাড়িঘর রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে যায়।
আবুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, তীব্র স্রোতে বাড়ির ছাদ পর্যন্ত ডুবে গেছে। মানুষ প্রাণ নিয়ে বাঁচতে ছুটে গেছে আশ্রয় কেন্দ্রে, তবে ঘরের জিনিসপত্র আসবাপত্র কিছুই নিতে পারেনি। রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
শুভ নামে একজন জানান, মুহুরী নদীর পানি তীব্রতা বেড়ে সব ভেঙে ৩ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানির স্রোত এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মানুষ দাঁড়াতে পারেনি। আশেপাশের বাড়িঘর ডুবে ছাদ পর্যন্ত পানি উঠে যায়। ফলে মানুষজন ছাদে আশ্রয় নেয়। পানিতে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী সব ভেসে যায়।
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে ৪৬ জন মানুষ ছাদে আটকে ছিলাম গরু ছাগলসহ। সারারাত আতঙ্কে কাটানোর পর পরদিন সেনাবাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করে।
বিলকিস নামে একজন বলেন, পানির স্রোতে বাড়ির দেয়ালও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রায় সব টিনের ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। চোখের সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছি যা আমার জীবদ্দশায় প্রথম। এখন পানি কমে গেলেও সব ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে। আমাদের বেঁচে থাকার সব অবলম্বন শেষ। এখন সব যোগাযোগ বন্ধ, এলাকায় কিছু ত্রাণ আসছে তা খেয়ে দিন পার করছি।
কথা হয় পথচারী সখিনা বেগমের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ অনেকপথ হেটে হেটে যেতে হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজনে কোন কিছু কেনার জন্যও বাজারে যেতে পারছিনা। নদীর পানি কমেছে তবে আমাদের দুর্দশা কবে কাটবে তার কোন ঠিক নেই।
এবিষয়ে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক জানান, রাস্তা-ব্রিজের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কাজ চলছে। তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।