একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা-ছেলে-মা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এইচএসসি পাস করলেন বাবা-ছেলে-মা/ছবি: সংগৃহীত

এইচএসসি পাস করলেন বাবা-ছেলে-মা/ছবি: সংগৃহীত

সংসারের ঝুট ঝামেলা এড়িয়ে ছেলে ও বাবা-মা মাঝে মাঝেই কলেজে করতেন ক্লাস, একইসাথে বসেন পরীক্ষার হলে। এরপর মেধাভিত্তিক তালিকায় ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষায়। এমনটি ঘটেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামে।

উত্তীর্ণরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত জানু বিশ্বাসের ছেলে বিএম ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা ও ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম। ফারুক হোসেন জিপিএ ৪.৭১, স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা ৪.২৫ ও ছেলে হুজ্জাতুল ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা থেকে বাবা-মা ও ছেলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ইংলিশ ভার্সন) থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

এ দম্পতির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে বিয়ে হয় ফারুক জাকিয়া দম্পতির। বিয়ের আগে থেকেই লেখাপড়ার দিকে ব্যাপক ঝোক ছিলো উভয়েরই। কিন্তু অল্প বয়সে পরিবার বিয়ে দেবার ফলে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। দিতে পারেননি এসএসসি পরীক্ষাও। বিয়ে পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনটন, সাংসারিক ঝামেলা ও সন্তান গর্ভে আসায় ২০০৩ সালে প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও একসাথে এসএসসি পরীক্ষার হলে বসা সম্ভব হয় না দুজনের। পরে ২০২২ সালে খয়রান লুকমান হাকিম টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন স্বামী স্ত্রী। এরপর ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাভিত্তিক ফলাফলে উত্তীর্ণ হন। গত ১৫ অক্টোবর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর প্রশংসায় ভাসছেন ছেলে ও বাবা-মা।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আমার বাবা মা সাংসারিক ঝুট ঝামেলাকে পাশ কাটিয়ে আমার সাথে পরীক্ষায় বসেছেন। এটিকে অনেকেই ব্যাঙ্গাত্মকভাবে দেখলেও আমি অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। মূর্খতাকে ছাপিয়ে আলোকিত পরিবার গড়ার বাসনার জায়গা থেকেই আমাদের পড়াশোনা। আমি চাই আমার সাথে বাবা-মা-ও অনার্স মাস্টার্সের লেখাপড়া চালিয়ে যাক।

জাকিয়া সুলতানা বলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনা করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু মা-বাবার সংসারে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। এরপর আমার স্বামী ও ছেলের পরামর্শে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখায় স্বামী স্ত্রী দুজেনি ভর্তি হই। সংসার সামলে মাঝে মাঝে ক্লাসও করতাম আমরা। শুরুতে এগুলো নিয়ে অনেকেই কানাঘুষা করলেও এখন পাশ করার পর অনেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বিষয়টি ভালোই লাগছে।

এব্যাপারে সুজানগরের সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন, ছেলের সঙ্গে বাবা-মা পাশ করার এ সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

ফারুক হোসেন বলেন, বিয়ে করে সংসার চালাতে গিয়ে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় আর সেটি চালানো সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২২ সালে এসএসসি ও এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ছেলে ও আমরা স্বামী স্ত্রী একসাথে পাশ করেছি। বিষয়টি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। এছাড়া অনার্স মাস্টার্স শেষ করার ইচ্ছা আছে জানিয়ে তাদের পরিবারের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন ফারুক।

এব্যাপারে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ছেলে ও বাবা-মা একসঙ্গে ভালো ফলাফলে উত্তীর্ণ হবার বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তাদের দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। প্রত্যেকের মধ্যেই এধরণের প্রচেষ্টা থাকা উচিত। বাবা-মা ও ছেলের জন্য শুভকামনা রইল।